আচ্ছা, নস্যি জিনিসটা আপনারা কতটা চেনেন? যদিওবা অনেকে চেনেন বা জানেন, তার সম্পর্কে খুব একটা ভালো ধারণা নেই বললেই হয়। কারণ, প্রচন্ড ঝাঁঝযুক্ত একটি পাউডার জাতীয় নেশার সামগ্রী। আমাদের সাধারণ মানুষের তা ভালো লাগার প্রশ্নই ওঠেনা। তবে যাঁরা এর নেশায় আচ্ছন্ন, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু এমনই এক জিনিস ভেলকি দেখিয়ে দিল। অসম্ভবকে সম্ভব করে দিল। জানতে ইচ্ছে করছে তো, কি? তাহলে বলি শুনুন, দু'মাস ধরে গভীর কোমায় থাকা এক রোগী চাঙ্গা হয়ে উঠলেন এই নস্যির সাহায্যে।
হ্যাঁ। একদম ঠিক শুনছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে জোয়ার আসতে চলেছে, বলা ভালো- জোয়ার প্রায় এসেই গেছে। বিভিন্ন রকম থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন রকম রোগের ক্ষেত্রে। কলকাতার এসএসকেএম-এ গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভর্তি ষাটোর্ধ জনার্দন ভট্টাচার্য্য। প্রচন্ড ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল জনার্দন বাবুর। তাতে দুই হাত-পা পক্ষাঘাত গ্রাস করে, চলে যায় বাকশক্তি। জনার্দনের ভাইঝি নিজেও পেশায় চিকিৎসক, স্নাতকোত্তর পড়ুয়া এসএসকেএম-এ। যখন কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেও তেমন কোনো উন্নতি হয়নি জনার্দনবাবুর। তখন ভাইঝি তার স্যারকে অনুরোধ করেন দেখতে। এই হাসপাতালে মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে যিনি হাতযশ দেখিয়েছেন, সেই সন্দীপ কর বলেন, রোগীকে বেহালায় দরবারী কানাড়া, আর রোগীর পছন্দের রবীন্দ্রসংগীত শোনানো হয়েছে হেডফোনে। পাশাপাশি মস্তিষ্কের থ্যালামাস অংশে যাতে থ্যালামিক ফ্লাডিং হয়, সে জন্য পাঁচটি ইন্দ্রিয়কেই সজাগ করার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও দেওয়া হচ্ছে টেবিল ল্যাম্পের এর আলো, গোলাপ-রজনীগন্ধার সুবাস, নুন-মধুর স্বাদ, ত্বকে বিদ্যুতের শক, যাতে অসাড় হয়ে যাওয়া পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়কে ধীরে ধীরে উত্তেজিত করা যায়। এবং তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁরা নস্যি। জেনেছিলেন জনার্দন বাবুর নস্যির নেশা ছিল। তাই শেষ সম্বল হিসেবে নস্যিকে রেখেছিলেন। হয়েছে কিস্তি মাত। সামান্য হলেও চার সপ্তাহের মধ্যে এখন নাড়তে পারছেন হাত-পা।
যখন এসেছিলেন, তখন চেতনা মাপার সূচক গ্লাসগো কোমা স্কেলে তাঁর রাইডিং ছিল মাত্র ৩। নরম্যাল জিএস রাইডিং হয় ১৫। সোমবার চিকিৎসকেরা দেখেছেন এখন ১২ রিডিং রয়েছে। ডাক্তারেরা যথেষ্ট আশাবাদী এবং আমরাও আশা রাখবো যাতে জনার্দনবাবু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।