পুলিশ যখন বন্ধু

কথায় বলে পুলিশ ছুঁলে যে কত ঘা তা চিন্তার অতীত। কিন্তু সেই পুলিশ যদি জীবনকে একটা  নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে, সাফল্যের পথে এগিয়ে দেয় তাহলে! এমন ঘটনার কথাই বলবো।
                                
বলছি দিল্লী পুলিশের এক অভিনব উদ্যোগের কথা, যার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১২ সালে দিল্লীর জামিয়ানগর পুলিশ স্টেশনে এক লাইব্রেরী দিয়ে। যার উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের প্রান্তিক স্তরের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি, অপরাধ প্রবণতা হ্রাস এবং একটা সামাজিক সুস্থতা। আর এবার সেই উদ্দেশ্যেই দিল্লীর আর. কে. পুরাম থানার চিত্রটা পাল্টে দেন স্টেশন হাউস অফিসার শ্রী রাজেশ শর্মা।

Police-Station1

তাঁর উদ্যোগেই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সেই থানার ভিতরেই খোলা হয় এক লাইব্রেরী। সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, মানুষের চরিত্র, তার শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, ভালবাসা সব কিছুর ভিত্তি তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। আর সেই কথা মাথায় রেখেই মূলত সমাজের প্রান্তিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ড্রপ আউট বন্ধ করতে, তাদের উচ্চ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেন তিনি। 
                         
কিন্তু করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ  করতে হয় সেই লাইব্রেরী। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল - কলেজ বন্ধ, অনলাইন ক্লাস চলছে, আর সেই অনলাইন ক্লাসের জন্য  প্রয়োজন ইন্টারনেট ব্যবস্থার, আর সেই সমস্যায় জর্জরিত সমাজের প্রান্তিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। আর সেই সমস্যার সমাধানকল্পেই পরিস্থিতি একটু ভালো হতেই সেই শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আবার চালু হয়েছে এই লাইব্রেরী।

কী নেই সেখানে! ৪০০০ বই সম্বলিত এই লাইব্রেরীতে আছে NCERT-র ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বই, ১২০-র বেশি আইনের বই, ২৩০০টি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বই, সাহিত্যের বই, ১৯০০ ম্যাগাজিন ও একাধিক সংবাদপত্র। এছাড়াও আছে  ফ্রি wi fi,  ১০ টি কম্পিউটার সমন্বিত ডিজিটাল রুম, আর আছে শান্ত পরিবেশ। যেখানে এমনিতেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে বাধ্য। আর সদস্যপদের জন্য  প্রয়োজন শুধুমাত্র আধার কার্ডের জেরক্স ও মন ও মনোসংযোগ।

Police-Station2
                          
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য আছে ক্র্যাশ কোর্সের ব্যবস্থাও। তবে থানার সাথে এই কাজে সহযোগী হয়েছে GAIL (ইন্ডিয়া) লিমিটেড, Shikhar Oraganisation For Social Development, প্রয়োজনে  শিক্ষর্থীদের কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থাও আছে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত খোলা এই লাইব্রেরী।   
                              
আরো মজার ব্যাপার হলো থানার অফিসাররা কিন্তু জটিল কেস সল্ভের পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষর্থীদের প্রয়োজনীয় প্রশ্নের সমাধান করে দেন, রীতিমতো শিক্ষক হয়ে তাদের উত্তর দেন। সখ্যতার এ দৃশ্য কিন্তু বেশ সুখকর, পুলিশ মানেই ভয়ের আবহ - তেমন কিন্তু এখানে নয়।
                             
আর সম্প্রতি এমন অভিনব উদ্যোগের জন্য শ্রী রাজেশ শর্মা এবং গ্রন্থাগারটি এশিয়া প্যাসিফিক চেম্বার অফ কমার্স, গোয়ার কাছ থেকে উদ্ভাবনী শিক্ষার জন্য প্রশংসার একটি শংসাপত্র পেয়েছে। আর বলতে দ্বিধা নেই, এই লাইব্রেরী অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই শিক্ষর্দের মানসিক জোর অনেকখানি বাড়িয়েছে, সাথে তাদের শিক্ষার প্রতি, আত্মনির্ভরতার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে - যা নিঃসন্দেহে সুস্থ সমাজ গড়ার এক পদক্ষেপ বলাই যায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...