সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী করোনার থাবায় প্রায় সব দেশেই জারি হয়েছে লকডাউন, দোকানপাট সব প্রায় বন্ধ। যা খোলা তাতে সেভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। অনলাইন কে যারা ভরসা করেছিলেন তারাও আরো বিপর্যস্ত , সেও এক্কেবারে মূর্ছা গিয়েছে অতিরিক্ত চাপে - আর তাতেই টান পড়তে আরম্ভ করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের। কিছু মানুষ আতঙ্কে প্রয়োজনাতিরিক্ত সামগ্রী জোগাড়ে তৎপর আবার কেউ ফিরে যাচ্ছে তা না পেয়ে। গোটা বিশ্বের ছবিটাই খানিক এমন। তবে বিপদে তারা পড়েছেন যাদের তেমন সামর্থ্য নেই । যদি এই ভাইরাস দূর না হয় তাহলে উচ্চবিত্তরাও এই বিপদের সম্মুখীন হবেন। তবে ইচ্ছে থাকলেও যে এভাবে সাহায্য করা যায় তার নজির গড়ে তুলেছেন শেলি অ্যান্ডারসন এক অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে ।কে ইনি ? কি সেই উদ্যোগ ? আজ এসব বলবো।
শেলির এই উদ্যোগ দুই ধারণার মেলবন্ধন। কেমন ? তা বলতে গেলে একটু আগে থেকেই বলতে হবে। সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত ফ্রি লাইব্রেরির সংখ্যা ৭৫০০০-এর কম নয়।এই ফ্রি লাইব্রেরি হলো রাস্তার ধারে ছোট্ট ক্যাবিনেট। সেখানে শুধু বই থাকে । মানুষ নিজের ইচ্ছে মতো বই রেখে বা নিয়ে যান । এগুলো ‘লিটল ফ্রি লাইব্রেরি’ নামেও পরিচিত।বিষয়টি দারুন সফল। তবে এই ক্যাবিনেট কন্সেপ্টকে কাজে লাগিয়ে আরেক অভিনব ঘটনার অবতারণা ঘটে ২০১৬ সালে জেসিকা ম্যাক ক্লার্ড এর হাত ধরে। তবে এবার আর বই নয় তার থেকেও প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্যাবিনেটের কথা ভাবেন তিনি।তার কারণ আছে। আমেরিকার আরকানসাস অঞ্চল প্রায়শই খাদ্য সংকটে জর্জরিত হওয়ায় জেসিকা ম্যাক ক্লার্ড , এর সমাধানে রীতিমতো একটা আন্দোলন গড়ে তোলেন । জেসিকা উদ্যোগ নিয়েছিলেন যাতে এলাকার সবাই নিজেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নিতে পারে। যাদের বাড়িতে যথেষ্ট সঞ্চয় আছে, তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো খাবার রেখে আসবে রাস্তার ধারে ক্যাবিনেটে, আর যাদের সেটা প্রয়োজন তারা সংগ্রহ করে নেবে। সেভাবেই কিছুটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সে ক্যাবিনেট ছিল শুধু খাবারের জন্য। আর এই দুই ধারণার মেলবন্ধনে শেলি অ্যান্ডারসন ফ্রি লাইব্রেরিগুলোকে করোনার আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য ফ্রিপ্যান্ট্রির রূপ দিয়েছেন। কিছুদিন হল দেখা যাচ্ছে, শুধু বই নয়। বইয়ের সঙ্গে থাকছে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী। যেমন টয়লেট পেপার, পেপার টাওয়াল, শুকনো খাবার বা ফলমূল। প্রথম প্রথম অনেকেই অবাক হলেও পরে নিজেরাও সেই উদ্যোগে সামিল হন । এভাবেই মিনেসোটার রাস্তায় তৈরি হল ‘লিটল ফ্রি প্যান্ট্রি।
প্রথমে তিনি নিজের সন্তানদের স্কুলে তাদের ফ্রি লাইব্রেরিকে ফ্রি প্যান্ট্রি বানিয়ে তুলতে উদ্যোগী হন।অনুমতিও পেয়ে কিছু শুকনো খাবার আর টয়লেট পেপার রেখে এলেন সেখানে। কাজও হল শেলির পরিকল্পনায়। এমন ধরণের মানবিক উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার দাবিদার। ভালোবাসার এক আশ্চর্য স্পর্শ রয়েছে এখানে কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভবনা নেই। করোনার বিরুদ্ধে এমন মানবিক উদ্যোগ যেন এক জয়ের ইঙ্গিতবাহী ।