শীঘ্রই "বিবাহ অভিযান" করুন

হ্যাঁরে, অনেক দিন নতুন কোনো মুভি দেখিনি চলনা একদিন দেখতে যাই! আল হাবিবি! কাল যাবি কী? চমকালেন নাকি?  আরে চমকাবেন না দাদা, কারন হলে এসেছে বিসখাত (বিখ্যাত) পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তর ছবি "বিবাহ অভিযান", দমফাটা হাসি হাসতে চাইলে হলে যান আর টিটিক(টিকেট)কেটে ঢুকে পড়ুন। বাংলা সিনেমার যে কমেডি ছবি তৈরির ঐতিহ্য ছিল তা প্রায় যেতে বসেছে, আর অরিজিনাল গল্প নিয়ে বাংলা কমেডি ছবি তৈরী ব্যাপার টা অনেকটা "কাঁঠালের আমসত্ত্বে"র মতন, কিন্তু এইসময় দাঁড়িয়ে বিরসা দাশগুপ্ত যে দুঃসাহসিক অভিযান করলেন তা তারিফের যোগ্য।

    ছবিটিতে অভিনয় করেছেন অঙ্কুশ, অরিন্দম ভট্টাচার্য, রুদ্রনীল ঘোষ, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, সোহিনী সরকার, প্রিয়াঙ্কা সরকার, নুসরত ফারিয়া ও আরও অনেকে। অঙ্কুশের চরিত্রের নাম অনুপম, তার স্ত্রী রাই (নুসরত) একজন নেত্রী,  তিনি ও তার কমরেডরা শহর জুড়ে আন্দোলন করেন আর অনুপম  বৌভক্ত, বৌয়ের জন্য রান্না করেন ঘর ঝাঁট দেন আবার চাকরিও করেন, অনুপমের বন্ধু রজতের (রুদ্রনীল) অবস্থাও করুণ, তার স্ত্রী মায়া (সোহিনী) সারাদিন পুজো করেন আর বাংলা সিরিয়ালের রিপিট টেলিকাস্ট দেখেন, স্বামীর শরীরের কোন জায়গায় ফাঁকা দেখলেই সেখানে একটা করে মাদুলি বেঁধে দেন মায়া এমনকি পায়ের বুড়ো আঙুলও বাদ যায় না। বৌদের হাত থেকে কয়েকদিন  মুক্তি পেতে দুই বন্ধু অফিসে মিথ্যে বলে দার্জিলিং যাওয়ার প্ল্যান করেন কিন্তু সেখানেও ঘটে বিপত্তি।

    দার্জিলিং যাওয়ার বদলে বিপাকে পড়ে দুজনে ওঠে তারাপীঠের বাসে আর সেখানেই মালতীর (প্রিয়াঙ্কা) কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়া দুর্ধর্ষ ডাকাত বুলেট সিং (অনির্বাণ) তাদের অপহরণ করে, ব্যাস আজ তবে এইটুকু থাক বাকি কথা হলে হবে মানে হলে গিয়ে ছবিটা দেখতে হবে তবেই উপভোগ করতে পারবেন এই হাসির ফুলঝুরি।

আষাঢ়ে ছবি মুক্তি পেলেও বিরসার এই ছবির ছন্দ মন্দাক্রান্তা নয়, একেবারে ঝিনচ্যাক বিট। বাড়িতে ফিরে যাদের দিকে তাকিয়ে আপনার মনে হয় "দেখতে বৌ বৌ" কিন্তু মস্ত ভৌ ভৌ সে কথাও আপনি বিলক্ষণ জানেন এবং তাদের সামলাতে আপনাকে খেতে হয় নাকানিচোবানি, এই যুগ যুগ ধরে চলে আসা টক ঝাল মিষ্টি সম্পর্কের নানান টানাপোড়েন কে হাসির মোড়কে পর্দায় এনেছেন বিরসা। পরিচালক অভিনেতা নির্বাচন করেছেন যথাযথ। রুদ্রনীলের কমিক সেন্স যে এককথায় অনবদ্য তা সবাই জানেন, পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন সোহিনীও,  ওপারের কন্যে নুসরত আর তার নায়ক অঙ্কুশও নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, আর অনির্বাণ! যতদিন যাচ্ছে বাংলা ছবির পরিচালকেরা অনির্বাণ কে পেঁয়াজের খোসার মতন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন আর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে একটা করে চকচকে নতুন খোসা, বুলেট সিংয়ের মতো ডাকাতের হাতে বাংলা ছবির দর্শকরা যেকোনো অচ্যাতার (অত্যাচার) সহ্য করতে রাজি (বিশেষত মহিলা ফ্যানেরা), আর বুলেটের ক্রাশ মালতীর চরিত্রে প্রিয়াঙ্কাও দারুন অভিনয় করেছেন, তবে খুব কম সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে মেলে ধরার। তবে ছবিটির প্রথম ভাগ কিছুটা গতি মন্থরতায় ভুগেছে, দ্বিতীয় ভাগ চলেছে দারুন ছন্দে। এই ছবির রেসিপিতে একেবারে শেষকালে পাঁচফোড়ন দিয়েছেন বিরসা, আর এই ফোড়নটি হল অম্বরীশ ভট্টাচার্য, অল্প সময়েই নিজের জাত চিনিয়েছেন এই অভিনেতা, বাংলা ফিল্ম মেকাররা অম্বরীশকে নিয়ে যে এখনো বড় কিছু ভাবলেন না কেন সেটাই আশ্চর্যের। তবে ভালো সংলাপ ভালো অভিনয় এসবের মাঝখানে পরিচালক যে কেন স্যান্ডি সাহাকে ব্যবহার করলেন সেটা উনিই জানেন, কারন থাকলে স্যান্ডিকে নিয়েও আরও অনেক কিছু ভাবা যেতে পারতো, এই ছবির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা গাজোয়ারি লেগেছে। দর্শকরা হলে প্রাণ খুলে হাসতে হাসতে এই সিনেমা দেখেছেন, অকারণে স্ল্যাং ব্যবহার থেকেও পরিচালক বিরত থেকেছেন, হাসির ছবি বাস্তবধর্মী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই কিন্তু একটা নতুন গল্পের দাবি দর্শকদের সব সময় থাকে, বিরসা সেই দাবী যোগ্যতার সাথে পূরণ করেছেন। হলে গিয়ে বিবাহ অভিযান দেখুন, ইচ্ছে হলে নিজেও অভিযান করুন, আর অবশ্যই বাংলা সিনেমার পাশে থাকুন।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...