২ মে ১৯২১ বাংলার বুকে জন্ম নিল এক প্রতিভা। সুকুমার রায় আর সুপ্রভা রায় জন্ম দিলেন এক শিল্পীর। যে শিল্পী ভবিষ্যতে বাংলা ছায়াছবি জগতের এক অন্যবদ্য রুপকার হয়ে ওঠেন। পিতা সুকুমার রায় ও মাতা সুপ্রভা দেবী তাঁদের সন্তানের নাম রাখলেন সত্যজিৎ। হ্যাঁ আজকের দিনেই জন্ম হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের। বাল্যকাল থেকেই সত্যজিৎ রায়ের ফাইন আর্টসের প্রতি এক আলাদা আকর্ষণ ছিল কিন্তু অল্প বয়সে পিতৃহারা হওয়ার কারণে সেই দিকে অতটাও মনোযোগ দিতে পারেননি তিনি। বাণিজ্যিক চিত্রকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ১৯৪৮ সালে ফরাসি পরিচালক জিন রেনয়ের ইতালিও নিওরিয়েলিস্ট ফিল্ম “বাইসাইকেল থিবস” দেখে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন। সত্যজিৎ রায় তার জীবদশায় প্রচুর পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তার এই ৪২ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি অনেক ছায়াছবির পরিচালনা করেছেন তার মধ্যে কয়েকটি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল:
সত্যজিৎ রায়ের উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি ‘অপু ট্রায়োলজি’। নাবালক থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক অপুকে নিয়ে এই ছবিগুলি তৈরী করেন তিনি।
পথের পাঁচালি – ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি ১১ টি আন্তজার্তিক পুরষ্কার পায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫৬ সালের কান ফিল্ম ফিস্টিভ্যলে বেস্ট হিউম্যন ডকুমেন্টারি এওয়ার্ড। ১৯৯২ সালে যখন সত্যজিৎ রায় মৃত্যুশয্যায় তখন পথের পাঁচালি অসকার পায় যা ভারতীয় ফিল্ম ইতিহাসের একমাত্র ছবি যাকে এই পুরষ্কার দিয়ে সন্মানিত করা হয়।
অপরাজিত – ১৯৫৭ সালে সত্যজিৎ রায় তার অপু ট্রায়োলজির দ্বিতীয় অংশ হিসেবে এই ছবি নির্মাণ করেণ। ছবিটিতে অপুর শৈশব থেকে কৈশরে কলকাতার কলেজে পড়ার সময়কার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই ছবি। ১১টি আন্তজার্তিক পুরষ্কার সহ ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের স্বর্ণ সিংহ পুরষ্কার পায়।
অপুর সংসার – ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায় অপু ট্রায়োলজির শেষ অধ্যায় অপুর সংসারের নির্মাণ করেণ। ছবিটিতে বেকার অপুর চাকরির সন্ধানে কলকাতায় আসা এবং ঘটনাক্রমে অপর্ণার সাথে তার বিবাহ এবং সন্তান জন্ম দিয়ে অপর্ণার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই ছবি তৈরী করেণ তিনি। ন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ছাড়াও প্রচুর আন্তজার্তিক পুরষ্কার পায় এই ছবি।
পরশ পাথর – অপু ট্রায়োলজির পর ১৯৫৮ সালে সত্যজিৎ রায় এই ছবি তৈরা করেণ। এই ছবিটিতে দর্শক এক হাস্যরস সমৃদ্ধ সত্যজিৎ রায়কে দেখতে পান। পরেশ চন্দ্র দত্ত নামক এক সামান্য ব্যাঙ্কের ক্লার্কের এক যাদু পাথর হাতে পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ছবি তৈরী করেণ তিনি।
জলসাঘর – তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে ১৯৫৮ সালে এই ছবির নির্মাণ করেন। তৎকালিন সমাজের জমিদারদের পতন নিয়ে এই ছবি তৈরী করেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – ১৯৫৮ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে নিয়ে এক ছবি তৈরী করে সত্যজিৎ রায় যা ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকির ১০০ বৎসর পুর্তিতে এই ছবি মুক্তি পায়।
সত্যজিৎ রায়ের ৪২ বছরের ছায়াছবির জীবনে অনেক ছবি করেছেন| তার মধ্যে প্রতিটি উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে সেরার সেরা হল গুপি ও বাঘা ধারাবাহিক-এর তিনটি ছবি - ১৯৬৯ সালের ছবি গুপি গাইন বাঘা বাইন, ১৯৮০ সালের হীরক রাজার দেশে ও ১৯৯১ সালের ছবি গুপি বাঘা ফিরে এলো। সত্যজিৎ রায়ের তার মৃত্যুকালে আগন্তুক ও শাখাপ্রশাখার মত ছবিও তৈরী করেন। ২ মে ১৯২১ সালে ভারতীয় সিনেমার যে সূর্যদয় হয়েছিল সেই সূর্য ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে চিরকালের মত অস্ত চলে যায়।
নেমার যে সূর্যদয় হয়েছিল সেই সূর্য ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে চিরকালের মত অস্ত চলে যায়।