হিন্দু পুরাণ মতে শচী দেবী দেবরাজ ইন্দ্রের স্ত্রী। তাঁকে দেবী রূপে কল্পনা করা হয়। যদিও তিনি দেবীরূপে পুজিত হন না তবুও ইন্দ্রানী রূপে দেবতার আসনেই তাঁকে বসানো হয়েছে হিন্দু পুরাণে। কিন্তু এই শচী দেবী একজন বৈদিক নারী হিসেবেও পরিচিত। ঐতিহাসিকরা বলেন দুই শচী আসলে একই নারী।
শচী দেবীর পুরো নাম শচী পৌলমী। ঋষি পৌলোমার কন্যা তিনি। ঋক বেদের দশম মণ্ডলের ১৫৯ তম সূক্তের রচয়িতা হিসেবে তিনি পরিচিত। এই সূক্তটি পবিত্র বেদে নারীর সম্মানের একটি প্রমাণ। ঐতিহাসিকদের মতে দেবরাজ ইন্দ্রের স্ত্রী ইন্দ্রাণী অর্থাৎ শচী দেবী রচনা করেছেন এই সুক্তটি।
ঋষি পৌলমা ছোট থেকেই শচীকে মানুষ করেছিলেন স্বাধীনচেতা মনোভাবের সঙ্গে। তাই বৈদিক সমাজের অংশ হয়েও তিনিই প্রথম নারীদের সম্মান নিয়ে বৈদিক স্তোত্র রচনা করেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র বহুবার বিপদে পড়েছেন নানা কারণে। শচী দেবী বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে রক্ষা করেছেন স্বামীকে।
দেবরাজ ইন্দ্রের ঔরসে তাঁর জয়ন্ত নামক পুত্রের জন্ম হয়েছিল। শচী দেবী অত্যন্ত বুদ্ধিমান নারী ছিলেন। একবার যখন ইন্দ্রকে অজ্ঞাতবাসে যেতে হয়েছিল তখন এক রাজা শচীর অবমাননা করতে উদ্যোগী হন। স্বামীহীনা নারী যে অসহায় নয় সে সময়েও লড়াই করে প্রমাণ করেছিলেন শচী। তবে তাঁকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন দেব গুরু বৃহস্পতি। বৈদিক যুগে শচীকে নিয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। বুদ্ধিমান, বিদূষী, সাহসী বৈদিক নারী হিসেবেই তিনি পরিচিত। কিন্তু হিন্দু পুরাণে তাঁর সাহসিকতার প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁকে দেবী রূপেও কল্পনা করা হয়েছে।
কালিকাপুরাণ মতে শচী দেবী হলেন দুর্গার অষ্টম অবতারের অন্যতম দেবী ঐন্দ্রি। এই দেবী গজবাহনা, বজ্রহস্তা ও সহস্রনয়না। যদিও হিন্দু পুরাণ মতে শচী দেবী অর্থাৎ ইন্দ্রাণী কোথাও পুজিত হন না। তাঁকে নিয়ে নেই কোন উৎসব। তাঁর স্তুতি বা বন্দনার কোন তথ্য নেই।
বৈদিক মতে শচী দেবী প্রথম নারীদের অধিকার নিয়ে বৈদিক যুগে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর বাবাকে। ঋষি পৌলোম া মেয়ের প্রশ্নে হতাশ হননি। বরং চমকে গিয়েছিলেন। ছোট্ট মেয়ের এমন সংবেদনশীল প্রশ্নে বাবা ঋষি পৌলোম া খোদ মেয়েকেই বলেন নারীদের সম্মান ও অধিকার নিয়ে স্তোত্র রচনা করতে। সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজ করেছিলেন শচী।
বৈদিক এবং পুরাণ দুই মতেই তবে শচীকে সাহসী ও বিদুষী নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।