নিত্য বেদচর্চা করার জন্য তাঁকে ‘ব্রহ্মবাদিনী ব্রহ্মজায়া’ বলা হত

ছোট্ট মেয়েটা সারাদিন বাবার পায়ে পায়ে ঘুরত। বাবা ছিলেন প্রসিদ্ধ এক বৈদিক ঋষি। বাবা সারাদিন কী করছে তাই নিয়ে মেয়ের আগ্রহের অন্ত ছিল না। তাই প্রথম যেদিন বুঝতে পারেন বাবা বিশেষ একটা চর্চা বা সাধনায় মগ্ন থাকেন, মেয়ের আগ্রহ তখন আরও তীব্র হয়।

প্রথমদিকে ছেলেমানুষের খেয়াল ভেবে মেয়ের বেদচর্চার প্রতি আগ্রহকে অতটা গুরুত্ব দেননি বাবা। সেই বাবা একদিন দেখলেন, তাঁর নিজের কাজ শুরু করার আগেই তাঁর ছোট্ট মেয়েটি শুরু করে দিয়েছে বেদচর্চা। তখন সেই বাবা বুঝতে পেরেছিলেন এই মেয়ের বেদের প্রতি আগ্রহের উৎস তাঁর  অন্তরমহল ।

এভাবেই বেদচর্চার হাতে খড়ি হয়েছিল বৈদিক নারী জুহুর। বৈদিক নারীর জুহু এক প্রসিদ্ধ ঋষির কন্যা ছিলেন। ইতিহাসে জুহুর বাবার নাম পাওয়া যায় না।

বৈদিক সমাজ নানা ধারণার মিশ্রণে গড়ে উঠেছিল। মেয়েদের বেদ চর্চা নিয়ে প্রথম দিকে বৈদিক সমাজের অনুমোদন ছিল‌ না। তবে অনেক মহিলারাই সেই প্রথা ভেঙেছিলেন। কেউ কেউ রীতিমতো লড়াই করেছিলেন বৈদিক চর্চার ক্ষেত্রে মেয়েদের অধিকারের জন্য।

বৈদিক সমাজেকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করা যায়। একেবারে প্রথম দিকে মেয়েদের অধিকারের ক্ষেত্রে যতটা লড়াই করতে হয়েছে, সময় যত এগিয়েছে বৈদিক যুগে মেয়েরা তত অধিকার পেয়েছে। ঋষিকা জুহু আধুনিক বৈদিক সমাজের এক প্রসিদ্ধ নারী ছিলেন।

তাঁর পিতা পুজো করতেন। সঙ্গে বেদচর্চা। বাবার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বেদচর্চা শুরু করেছিলেন এই নারী। সারাদিন বেদচর্চায় নিমগ্ন থাকতেন তিনি। তাই তাঁকে ব্রহ্মবাদিনী বলা হত। বেদের প্রতি তাঁর অধ্যাবসায় ছিল অনন্য।

যে ছোট্ট মেয়েটা একদিন বাবার হাত ধরে বেদচর্চা শিখেছিলেন একসময় এই বেদের অধ্যাবসায়ের ক্ষেত্রে বাবাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ কন্যা ছিলেন বলে তাকে ব্রাহ্মণ দুহিতা অর্থাৎ ব্রহ্মজায়াও বলা হত।

ঋকবেদের দশম মন্ডলের ১০৯তম সূক্তের ঋষি এই ঋষিকা জুহু। তাঁর রচিত মন্ত্রগুলি ঋকবেদের অন্যতম স্তোত্র হিসেবে ধরা হয়। ঋকবেদের দশম মণ্ডলের ১০৯ তম সূক্তের মন্ত্রগুলি রচনা করার ক্ষেত্রে প্রথমদিকে রাজি ছিলেন না এই নারী জুহু। ইতস্তত বোধ করছিলেন। কিন্তু মেয়েটির বাবা অর্থাৎ সেই প্রসিদ্ধ ঋষি জুহুকে ভরসা যোগান।

অবশেষে মন্ত্রগুলি রচনা করেন জুহু। এই বিদূষী বৈদিক নারীর অপর নাম বাক। তবে জুহু হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। বৈদিক যুগে বাঘ নামের অন্য আরেকজন ঋষিকা রয়েছেন। তিনিও যথেষ্ট প্রসিদ্ধ মহিলা ঋষিকা ছিলেন বৈদিক যুগে।

বাক, জুহু এই সকল বৈদিক নারীরা সমাজের ক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন সেই সময় থেকেই। এইসব দৃষ্টান্ত বর্তমান সমাজে নারীদের জন্য একটা পথ প্রস্তুত করে দিয়েছেন। সেই পথ হয়তো খুব একটা সুগম হয়নি আজও, তবুও সেই প্রস্তুত করা পথে হেঁটে চলেছেন বহু নারী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...