ঋকবেদের মন্ত্র লিখেছিলেন কোন নারীরা

বৈদিক সমাজে নারীদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই নানা অনুষঙ্গ উঠে আসে। নির্দিষ্ট একটি দিককে নির্দেশ করা যায় না এই ক্ষেত্রে। তাই সমাজে কখনও নারীদের অবস্থান উজ্জ্বল থেকেছে, কখনও নারীরা বঞ্চিত হয়েছেন, অবদমিত হয়েছেন।

বৈদিক যুগে সমষ্টিগতভাবে নারীদের বিরোধ বা কোন ক্ষেত্রে সহমত হওয়ার বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। অর্থাৎ সেই সময় মেয়েরা গোষ্ঠীতে বিশ্বাসী ছিল। ভালো কাজের ক্ষেত্রে দল বেঁধে একসঙ্গে কাজ করতে তাঁরা স্বচ্ছন্দ ছিলেন।

মন্ত্র রচনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। তেমনি উদাহরণ স্বর্ণগা। অনেক মহিলা বৈদিক ঋষিদের একত্রে বলা হতো স্বর্ণগা। স্বর্ণগা কোন একক ঋষি নন। ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের একশ বিয়াল্লিশতম সূক্তের ঋষিদের একসঙ্গে স্বর্ণগা বলা হয়।

সে সময় বৈদিক যুগের মেয়েদের পড়াশোনা ও মন্ত্র রচনার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময় থাকত। কোনও মহিলা নিজের মত করে বৈদিক সমাজের উপযোগী ঋকবেদের মন্ত্র রচনা করেছেন। কয়েকজন মহিলা ঋষি একসঙ্গে মন্ত্র রচনা করার সিদ্ধান্ত নেন। ঋকবেদের দশম মণ্ডলের একশ বিয়াল্লিশতম সূক্ত রচনা করেছিলেন এই মহিলা ঋষিরা। এই সূক্তে মোট আটটি মন্ত্র রয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রই অন্তরাত্মার বিকাশের কথা বলে।

যুগের কোন সময়ই সব দিক থেকে নিখুঁত হয় না। বৈদিক যুগ ও তার ব্যাতিক্রম নয়। মানবিকতার প্রকৃত বিকাশ ও  তার প্রকৃত প্রকাশ সে সময়ও ছিল জরুরী। এই মহিলা ঋষিরা এই বিষয়টার উপরই জোর দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই রচনা করেছিলেন ঋকবেদের এই মন্ত্রগুলি। মোট আটটি মন্ত্রে আগুনের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়েছে।

আগুন পবিত্র, উজ্জ্বল। আবার ভয়ংকর রূপ ধারণও করতে পারে। মহিলা ঋষিদের রচিত এই মন্ত্রগুলিতে আত্মাকেও আগুন রূপেই কল্পনা করেছে। আত্মাও তার জন্মের শুরুতে এমনই পবিত্র, উজ্জ্বল, শূভ্র থাকে। কিন্তু সেই আত্মা যদি রিপু মুক্ত না হয় তখন সে ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। মন্দ চিন্তা করা আত্মা আগুনের ধ্বংসাত্মক রূপের মতোই ভয়ঙ্কর হতে পারে। এমনটাই বলা হয়েছে এই মন্ত্রে।

স্বর্ণগা রচিত আটটি মন্ত্রের রচয়িতা ঋষিকারা হলেন- ঋষি জরিতা যিনি প্রথম ও দ্বিতীয় সূক্ত রচনা করেছিলেন। ঋষি দ্রোণা ছিলেন  তৃতীয় ও চতুর্থ সূক্তের রচয়িতা। ঋষি সরিস্ক্রভা পঞ্চম ও ষষ্ঠ সূক্তের রচয়িতা। ঋষি স্তম্ভমিত্রা শেষ দুটি সূক্ত অর্থাৎ সপ্তম ও অষ্টম সূক্তের রচয়িতা ছিলেন। এই ঋষিকে মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিও বলা হয়।

প্রতিটি মন্ত্রই আত্মার অন্ধকার দূর করার কথা বলে। আগুন যেমন যে কোন অন্ধকার পরিস্থিতিতে আলো নিয়ে আসতে পারে ঠিক তেমনভাবেই আত্মাও বিকশিত হয়ে অন্ধকার মনকে আলোর পথ দেখায়। আত্মার সঠিক পথের সাধনা করার কথাই বলা হয়েছে এই মন্ত্রগুলিতে।

বেদের এই মন্ত্রগুলি যেমন জীবনের ক্ষেত্রে নিজস্ব মহিমায় উজ্জ্বল, এই চারজন ঋষিকা যাঁরা আটটি মন্ত্র রচনা করেছেন, তাঁরাও বৈদিক যুগে নারীদের অবস্থান অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে চিহ্নিত করেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...