অংশ নিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, ইচ্ছে ছিল অভিনেতা হওয়ার, হলেন সুরের জাদুকর

কভি কভি মেরে দিল মেঁ...খ্যায়াল আতা হে...’ ‘ম্যায় পল দো পল কা শায়ের হুঁ’, ‘ইন আঁখো কি মস্তি’, ‘তেরে চেহরে সে নজর’, ‘মোহাব্বত বড়ে কাম কি’, ‘আ যা রে ও মেরে’, ‘পেয়ার কা দর্দ হ্যায়’ -এখনও এ প্রজন্মে গেঁথে রয়েছে তাঁর সুর। চলে গেলেন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সেই কিংবদন্তি সুরকার- মহম্মদ জহুর খৈয়াম হাশমি ওরফে ‘খৈয়াম’। ভারতীয় ছবির দর্শকদের প্রায় চার দশক ধরে সুরের জাদুতে বেঁধে রেখে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে সোমবার রাতে ৯৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।

খৈয়ামের প্রয়াণে টুইটের মাধ্যমে ভারতের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর লিখেছেন, ‘সংগীতের একটা যুগে অবসান হলো।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘অনেক ভালো গান আর সুরের জন্য তাঁকে মনে রাখবে আসমুদ্রহিমাচল।’

‘উমরাও জান’ (১৯৮১) ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের সংগীতজগতে ‘খৈয়াম’ নামে তিনি পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া ‘কভি কভি’ (১৯৭৬) ও ‘উমরাও জান’ ছবি দু’টির জন্য পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ফিল্মফেয়ার তাঁকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে ২০১০ সালে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১১-তে সংগীতে অবদান রাখার জন্য ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে। খৈয়াম ঝুলি ভরেছে সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার (২০০৭) ও হৃদয়নাথ পুরস্কার (২০১৮)-এ।

১৯২৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের অবিভক্ত পাঞ্জাবের নয়নেশ্বর জেলায় খৈয়ামের জন্ম। এরপর দিল্লি যান গান শেখার জন্য। সেখান থেকে পাকিস্তানের লাহোরে গিয়ে প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাবা গোলাম আহমেদ চিশতির সঙ্গে কাজ করেন। ওই সময় তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নেন। কিন্তু ভাগ্যচক্রে তিনি হয়ে ওঠেন 'সুরের জাদুকর'।

১৭ বছর বয়সে লুধিয়ানায় এসে তিনি সংগীত নিয়ে কাজ শুরু করেন। বলিউডে তিনি প্রথম কাজ করেন ‘ফুটপা্থ’ (১৯৫৩) ছবিতে। এরপর টানা পাঁচ দশকে তিনি ৩৭টি ছবির গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা এবং আবহসংগীতের কাজ করেন। তাঁর বেশির ভাগ ছবির গান খুব জনপ্রিয় হয়। ১৯৬১ সালে ‘শোলা অউর শবনম’ ছবির গানে সুর দিয়ে তিনি সবার নজর কাড়েন। সেই শুরু! এরপর ‘ত্রিশূল’, ‘বাজার’, ‘উমরাও জান’, ‘কাভি কাভি’, ‘নুরি’, ‘রাজিয়া সুলতান’সহ অসংখ্য ছবির গান তাঁকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।

ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট বি এন তিওয়ারি সংবাদমাধ্যমকে আগেই জানিয়েছিলেন, খৈয়ামের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছে। পাশাপাশি ছিল বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা। ১৫ আগস্ট সংকটাপন্ন অবস্থায় খৈয়ামকে সুজয় হাসপাতালে আনা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সঙ্গে ছিলেন খৈয়ামের স্ত্রী জগজিৎ কউর। তিনিও গুরুতর অসুস্থ।

খৈয়ামকে অনেক দিন থেকে দেখাশোনা করেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তালাত আজিজ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, খৈয়ামের মৃতদেহ গতকাল তাঁর বাড়িতে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার মুম্বইয়ের পশ্চিম আন্ধেরির ফোর বাঙ্গালোজ কবরস্থানে খৈয়ামকে সমাধিস্থ করা হয়েছে।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...