ঐতিহাসিক আজাদ ময়দান, যা এককথায় বলা যেতে পারে মুম্বাই ক্রিকেটের পীঠস্থান। এমন কোনও মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার নেই যারা এই ময়দানে নিজেদের খেলার ছাপ রাখেন নি। অজিত ওয়াড়েকর, দিলীপ বেঙ্গসরকার, সন্দীপ পাতিল থেকে শুরু করে শচীন তেন্ডুলকর, বিনোদ কাম্বলি ও হালের রোহিত শর্মা, অজিঙ্কা রাহানে – আন্তর্জাতিক ময়দানে নামার হাতেখড়ি হয়েছিল এই আজাদ ময়দানেই। কিন্তু এই আজাদ ময়দানের সমস্যা ছিল একটাই, আর তা হল শৌচালয়। শতবর্ষের অধিক পুরোনো এই মাঠে কারোর শৌচকর্মের প্রয়োজন হলে তাকে দৌড়তে হত ১ কিমি দূরে চার্চগেট স্টেশনে, কিংবা ৩৫০ মিটার দূরে সিএসটি তে, অথবা ৬০ মিটার দূরে ফ্যাশন স্ট্রিটের একেবারে শেষে যেতে হত। কিন্তু এবার সেই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে।
মহারাষ্ট্রের ক্রীড়ামন্ত্রী ও প্রাক্তন মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আশিস শেলার জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার মুম্বাই ক্রিকেটের তিন পীঠস্থান আজাদ ময়দান, ক্রস ময়দান ও ওভাল ময়দানে শৌচালয় গড়ে তুলবে। মুম্বাই ক্রিকেটারদের দুটি অ্যাসোসিয়েশন ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাব ও ইউনাইটেড ক্রিকেটার্স এর সাথে বৈঠক করে ক্রীড়ামন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আশিস শেলার জানান, “মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এর সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ক্রীড়া দপ্তর মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দ্বারা সংগঠিত শৌচালয় স্থাপনের পরিকল্পনাটি হেরিটেজ কমিটির কাছে নিয়ে যাবে, যা প্রয়োজনীয়। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন ক্লাবের তাঁবুতে বিশ্রামের জায়গা তৈরি করার কথা ভাবছি। আমি হেরিটেজ কমিটির সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করব”।
যদিও এ ব্যাপারে সমস্যা তৈরি হতে পারে কারণ আজাদ ময়দান একটি হেরিটেজ স্থান, আর বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপাল কর্পোরেশন এর আগেও এরকম আবেদন নাকচ করেছে। এমনটাই মনে করছেন প্রাক্তন ক্রিকেট প্রশাসক রত্নাকর শেট্টি।
প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার ওয়াসিম জাফর তার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে বলেন, “আমি অনেকবার দেখেছি, ম্যাচের আগে এক খেলোয়াড় দৌড়ে যাচ্ছে নিকটবর্তী কোনও স্টেশনে কারণ ময়দানগুলিতে টয়লেটের বন্দোবস্ত নেই। কখনও কখনও এমনও হয়েছে, যখন আমরা ফিল্ডিং করছি হঠাৎই দেখি একজন ফিল্ডার উধাও। যদিও আমাদের জানানো হত সে তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে কারণ সে চার্চগেট স্টেশন, কিংবা সিএসটি, কিংবা ফ্যাশন স্ট্রিটে যেত টয়লেটের জন্য”।
এই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটারদের। রোহিত শর্মা, অজিঙ্কা রাহানে, শার্দুল ঠাকুর থেকে শুরু করে চেতেশ্বর পুজারাদের মত বাইরের রাজ্যের ক্রিকেটারদেরও। শার্দুল ঠাকুরের কথায়, “আমাদের লাঞ্চ টাইম ছিল ৪০ মিনিট। যেহেতু ময়দানে কোনও টয়লেট ছিল না তাই আমাদের যেতে হত চার্চগেট স্টেশনে। ময়দান থেকে স্টেশন যেতে ১৫ মিনিট, ফিরতেও ১৫ মিনিট। আর যদি টয়লেটে লাইন পড়ে তাহলে ওখানেও অনেক সময় চলে গেল। এমনও দিন গেছে এই টয়লেটের জন্য আমাদের লাঞ্চ মিস হয়ে গেছে”।
সবমিলিয়ে একটি ভালো উদ্যোগ নিতে চলেছে মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু এটিই দেখার যে আদৌ এই পরিকল্পনা বাস্তব আকার ধারণ করবে কিনা।