কথায় বলে, ‘সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার’।পৌষ সংক্রান্তি গঙ্গাসাগর আর কপিল মুনির আশ্রম প্রায় সমার্থক! কিন্তু কে এই কপিল মুনি? কীভাবেই বা তাঁর অভিশাপের ফলে মর্তে আগমন ঘটল মা গঙ্গার?
মকর সংক্রান্তিতে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করেই সাগরদ্বীপে পুণ্যস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বিদেশ থেকে পুণ্যকামী মানুষ আসেন এই দ্বীপ ভূমিতে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, রামের পূর্ব পুরুষ ইক্ষাকু বংশের রাজা সগর ৯৯ বার অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন।
শততম যজ্ঞের সময় দেবরাজ ইন্দ্র ভয় ও ঈর্ষায় ঘোড়াটিকে অপহরণ করে কপিল মুনির অজান্তেই তাঁর আশ্রমের কাছে একটি গাছে বেঁধে রেখেছিলেন।
এবিষয় কিছুই জানতেন না কপিল মুনি।
সগরের ষাট হাজার পুত্র ঘোড়াটিকে খুঁজতে বেরলেন। তারা কপিলকে চোর অপবাদ দিলে, কপিল তাঁদের ভস্ম করে দিলেন। সগরের পৌত্র অংশুমান কপিলের কাছে এসে ষাট হাজার পুত্রের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন। কপিল বললেন, স্বর্গের নদী গঙ্গা নেমে এসে তাঁদের ভস্ম স্পর্শ করলে তবেই তারা প্রাণ ফিরে পাবেন।
তাঁদের বংশের পঞ্চম পুরুষ ভাগীরথ যজ্ঞ করে মহাদেবকে তুষ্ট করে পতিত পাবনী গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে মর্তে নিয়ে আসেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর বরে গঙ্গা পৃথিবীতে প্রবাহিত হন। মা গঙ্গার পুণ্যবারিস্পর্শে বেঁচে ওঠেন সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র। ঘটনাটি ঘটেছিল মকর সংক্রান্তির দিন। এই স্থানেই মা গঙ্গা মিশে যান সাগরে। এই কারণেই হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এটি একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, কপিল হলেন বিষ্ণুভক্ত অসুররাজ প্রহ্লাদের বংশধর ।
কপিল ছিলেন একজন বৈদিক ঋষি। তাঁকে সংখ্যা দর্শনের অন্যতম প্রবর্তক বলে মনে করা হয়। ভগবত গীতায় কপিল মুনির উল্লেখ রয়েছে| আবার কিছই শাস্ত্র অনুসারে অনুসারে তিনি ব্রহ্মার পৌত্র মনুর বংশধর। ভাগবত পুরাণে অবতারদের তালিকায় তার নামও পাওয়া যায়। ভগবদ্গীতায় কপিলকে একজন সিদ্ধযোগী বলা হয়েছে।
গঙ্গাসাগরে অবস্থিত কপিল মুনির প্রথম ইটের তৈরি মন্দির ১৯৬১ সালে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল। মন্দির নির্মাণে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় ১১ হাজার টাকা সাহায্য করেছিলেন। নব মন্দিরটি ১৯৭৪ সালে তৈরি করা হয়।
কুম্ভ মেলার পর গঙ্গাসাগর মেলাই দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা।