মেদিনীপুর জেলার কংসাবতী নদীর তীরের এক প্রাচীন শহর। বদলে যাওয়া বাংলার হারানো ইতিহাস বুকে আঁকড়ে আজও সজীব এই জনপদ। সুপ্রাচীন জৈন সংস্কৃতির চিহ্ন তার মহার্ঘ্য সম্পদ। নাম ‘জিন শহর’।
মেদিনীপুরের বীরেন্দ্র সেতুর উত্তর-পূর্বে কাঁসাইয়ের বাঁধ থেকে কয়েক মাইল দূরেই জিন শহর। নামে ‘শহর’ শব্দটি থাকলেও জিন শহর, আসলে গ্রাম।
সংস্কৃত ‘জিন’ কথাটির অর্থ জয়ী। যিনি আধ্যাত্মিক পথে পুনর্জন্ম প্রবাহ থেকে মুক্তিলাভ করেছেন তাঁকে জিন বলা হয়। তীর্থঙ্কররা সকলেই ‘জিন’। সেই জন্যই জনপদটিকে বলা হত ‘জিন শহর’।
নীহাররঞ্জন রায়ের ‘বাঙ্গালির ইতিহাস’ থেকে জানা যায় বাংলায় কপিশা নদীর তীরে জৈন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস ছিল। সেই সূত্রেই এই জনপদের নাম হয়েছে ‘জিন শহর’। কপিশা নদীই নাম লোকমুখে আজ ‘কংসাবতী ‘ থেকে কাঁসাই’।
নদী তীরের জনপদটি এক সময় এক সমৃদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র ও ছিল। ভারতের উত্তর প্রান্ত থেকে আসা বণিকরা ছিলেন তাঁরা জৈনধর্মের পৃষ্ঠপোষক। তাঁরাই নির্মাণ করেছিলেন জৈন মন্দির।
খ্রিস্ট-পূর্ব আড়াইশো-তিনশো বছর থেকে খ্রিস্টোত্তর এক হাজার বছর পর্যন্ত পূর্ব ভারত তথা বাংলায় জৈন ধর্মের প্রভাব ছিল।
বাংলার পার্শ্ববর্তী বিহার এবং ঝাড়খণ্ড জৈন ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভরকেন্দ্র। চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে কুড়ি জনই কেবল জ্ঞান লাভ করেন পরেশনাথ পাহাড়ে।
মহাবীরও বাংলায় এসেছিলেন। মূলত মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া অঞ্চলে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান ও অখণ্ড মেদিনীপুরের জৈনধর্ম বিস্তার ঘটেছিল। আজও তার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে এই সমস্ত জেলাগুলিতে। জৈন মূর্তি ও জৈন দেউলের ধ্বংসাবশেষ তারই প্রমাণ।
মেদিনীপুরে জিনশহর ছাড়াও বালিহাটিতে জৈন দেউল চিহ্ন আছে।
গবেষকদের মতে, এই দেউল খ্রিস্টীয় দশম শতকে নির্মিত। দেউলটি পূর্বমুখী এবং ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির। তীর্থঙ্কর মহাবীরের মূর্তি। কাঁসাই নদীর গর্ভ থেকেও তীর্থঙ্কর মূর্তি উদ্ধার হয়েছে।