কথিত আছে ভগবান রামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে তেহরি জেলার তপোবন গ্রামের থেকে উরি জেলার জঙ্কের দিকে গিয়েছিলেন পাটের দড়িতে ঝুলে ঝুলে। আর সেই স্থানেই ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় লক্ষ্মণঝুলা। কালের ইতিহাস বেয়ে সেই ঝুলা কাটিয়েছে ৯৬টি বছর। ভারতের স্বাধীনতা থেকে নব্য ভারতের ইতিহাসের সাক্ষী এই লক্ষ্মণঝুলা। ২০১৩ সালের উত্তরাখন্ডের ভয়াবহ বন্যাও কিছু করতে পারেনি লক্ষ্মণঝুলাকে। কিন্তু বয়স হার মেনে যায় সব কিছুর কাছে।
৯৬ বছর পর বন্ধ হল হৃষীকেশের সুবিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু লক্ষ্মণঝুলা। বৃদ্ধ হয়েছে এই সেতু, তাই পর্যটকের ভার বহনে অক্ষম, জানিয়ে দিল বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার থেকে উত্তরাখন্ড পূর্ত দপ্তর ওই সেতুর ওপর থেকে সমস্তরকম যান চলাচলের পাশাপাশি বন্ধ করে দিল পর্যটকদের যাতায়াতও। এখন থেকে নিচে গঙ্গে আর ওপরের দুলতে দুলতে বুক দুরু দুরু ভাব নিয়ে আর পার হওয়া যাবে না গঙ্গা।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হওয়া এই ঝুলন্ত সেতু সাক্ষ্য বহন করে আসছে বহু ইতিহাসের। সম্প্রতি উত্তরাখন্ড পূর্ত দপ্তর ডিজাইন টেক স্ট্রাকচারাল নামে এক বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। তাঁদের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী সেতুটির অধিকাংশ জায়গা হারিয়েছে কর্ম ক্ষমতা। যে কোনও সময় ঘটতে পারে বিপদ। অবিলম্বে এর মেরামতি প্রয়োজন। প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে একটি রিপোর্টে বিশেষজ্ঞরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, "এই মুহূর্তে সেতু বন্ধ করে দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, তা না হলে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।"
এ ব্যপারে উত্তরাখণ্ডের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব ওম প্রকাশ জানিয়েছেন, সেতুটির অধিকাংশ স্থানেই বয়সের ছাপ স্পষ্ট। আশঙ্কাজনক অবস্থা খতিয়ে দেখেই বিশেষজ্ঞদের একটি দল লক্ষ্মণঝোলা বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। সেতুটি খোলা রাখা বিপজ্জনক বুঝেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
প্রতি স্কোয়ার মিটারে ১৫০-২০০ কেজি ভার বহন করার ক্ষমতা ছিল লক্ষ্মণঝুলার। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের জেরে দ্রুতই নষ্ট হয়ে আসছিল সেতুটির অবস্থা। দুই পাড়ে থাকা সেতুটির পিলার হেলে গিয়েছে এক দিকে। কার্যত কিছুটা অসুবিধে হলেও কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ দিল সাধারণ মানুষ থেকে পর্যটকরা।
২০১৩ সালেই সেতুর অবস্থা ভালো নয় বলে উত্তরাখন্ড সরকার লক্ষ্মণঝুলাতে যান চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই আদেশ বাস্তবে কার্যকরী হয়নি। লক্ষ্মণঝুলার পাশেই রয়েছে তুলনামূলক নতুন সেতু রামঝুলা। এখন থেকে সেই পথেই হবে যাতায়াত, জানিয়ে দিল পূর্ত দপ্তর।