বুধবার তারাপীঠে বিশ্ববাংলা ঘাট ও সোলার কিচেনের উদ্বোধন করলেন তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তথা কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন কর্তৃপক্ষের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায়, সিইও তথা মহকুমা শাসক স্বেতা আগারওয়াল, মন্দির কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে তারাময় মুখোপাধ্যায় ও ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। পাশাপাশি মায়ের ভোগ রান্নার জন্য সোলার কিচেনেরও সূচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, টিআরডিএ গঠন হওয়ার পর তারাপীঠকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে মন্দিরকে অক্ষত রেখে অফিস, রান্নাঘর ভেঙে মন্দির চত্ত্বরকে খোলামেলা করবার কাজ শুরু হয়েছিল। মন্দিরের চারধারে তৈরী হয় আন্ডারগ্রাউন্ড। সেটারই এক দিকে রয়েছে ভোগ রান্নার ঘর। রোজ রান্নার কাজে কাঠের উনুন ব্যবহারের ফলে রান্নাঘরের দেওয়ালে ধোঁয়া থেকে কালো পুরু আস্তরণ পড়ে গিয়েছিল। এছাড়াও ধোঁয়ার ফলে সৃষ্ট দূষণ তো আছেই। এই সব কিছুর সমাধান হিসেবে তৈরি হল সৌর উনুন। এই কাজের জন্য তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদকে পৃথকভাবে ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। এদিন সেই সোলার উনুনে রান্নার জন্য মায়ের ভোগের সামগ্রী দিয়ে রান্নার সূচনা করেন মন্ত্রী। 'সোলার স্টিম কুকিং সিস্টেমে' এখানে রান্না হবে। ভোগ গৃহের পাশে সাড়ে চার মিটার উচ্চতার দু'টি ডিশ বসানো হয়েছে। এগুলির ব্যাসার্ধ ৫.২ মিটার। এই ডিশের মধ্যে সূর্যের তাপ ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে উৎপন্ন স্টিম ৩০ মিটার পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে ভোগ-গৃহের সোলার উনুনে পৌঁছবে। দিনে তিন-চার হাজারের বেশি লোকের রান্না করা যাবে এই সোলার উনুনে। মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর বারোটার মধ্যে মা তারার ভোগ রান্না করা হয়। প্রতিদিন খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, তিন-চার রকমের তরকারি ও পায়েসের ভোগ নিবেদন করা হয় তারা মা-কে। এছাড়াও ভোগের থালায় থাকে পোলাও, বলির পাঁঠার মাংস, মাছ ভাজা এবং চাটনি। নতুন এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে আরও বেশি পরিমাণ ভোগ রান্না করা যাবে বলে জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। সৌর উনুনে অপ্রচলিত শক্তি যেমন কাজে লাগানো যাবে, তেমনই এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিও বটে।
এছাড়া বুধবার সন্ধ্যায় দ্বারকার ব্রিজ সংলগ্ন নদীর ওপর বিশ্ব বাংলা ঘাটের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। সূত্রের খবর, ৫০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেই ঘাট নির্মিত হয়েছে। সেখানে পুণ্যার্থীরা দ্বারকা নদে স্নান করে মায়ের কাছে পুজো দিতে পারবেন। ড্রেস চেঞ্জের জন্য আলাদা চেঞ্জার রুম করা হয়েছে। তারই এক পাশে ঘূর্ণায়মান বিশ্ব বাংলার লোগো এবং ‘লাইট এন্ড সাউন্ড সিস্টেম’ বসানো হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রকম ধর্মীয় গানের সঙ্গে জলের ফোয়ারা ও লাইট জ্বলে উঠবে। যা আগত তীর্থযাত্রীদের কাছে যথেষ্ট বিনোদনমূলক হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
আজ সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে কৌশিকী অমাবস্যা লাগছে। পরের দিন বিকেল ৪টে ২৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। আজ সকাল থেকেই তাই ভক্তদের ভিড় শুরু হয়ে যাবে বলে মনে করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেই ভিড়ের কথা মাথায় রেখে এবার থেকে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে পুলিশ। তারাপীঠে এনে তাঁদের কথা মাথায় রেখে তৈরী করা বিশেষ লাইনে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।