বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে অনেকেই পছন্দ করেন দেরিতে ঘুমিয়ে সকালে দেরিতে উঠতে। সারাদিনের কাজের পর রাতের নিশ্চিন্ত ঘুমেও থাবা বসিয়েছে আমাদের মুঠোর স্মার্টফোনটি। রাতের পর রাত গান শুনতে শুনতেই কেটে যায়। ঘুমাতে যখন যাওয়া হয় তখন ঘড়িতে হয় ৩টে না হয় ৪টে। আপাতদৃষ্টিতে এর ফলে কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা মনে হলেও এই নিয়ে করা গবেষণা কিন্তু জানাচ্ছে অন্য তথ্য। জানা গেছে, বেশি দেরিতে ঘুমানোর অভ্যেস যাদের তাদেরই ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দেখা যাচ্ছে।গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, একই বয়সী মেয়েরা যারা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায় তাদের তুলনায় যারা দেরিতে ঘুমাতে যায় তাদের ওজন বেশি হয়।
'জেএএমএ পেডিয়াট্রিক্স' জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি থেকে জানা গেছে, গবেষকগণ বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করা ৮০৪ জন মানুষকে নিয়ে পরীক্ষা চালান।সকলেরই বয়স ছিল ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তাদের সকলকেই তাদের স্লিপ হ্যাবিট বা ঘুমানোর ধরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হয় এবং তাদের সকলকে 'অ্যাকটিগ্রাফ' নামক একটি ডিভাইস কব্জিতে পরানো হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন এই যন্ত্রটি বডি মুভমেন্টের ট্র্যাক রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। আমেরিকার একটি হেলথ কেয়ার কোম্পানির গবেষকদের বক্তব্য, পরীক্ষা চলাকালীন প্রতিটি ছেলেমেয়ের কোমরের মাপ নেওয়া হয়। তার থেকে ডুয়াল এনার্জি এক্স রে-পদ্ধতির সাহায্যে তাদের বডি মাসের অনুপাত নির্ণয় করা হয়েছে। নানা প্রশ্নের মাধ্যমে তাদের থেকে জানা হয়েছে তাদের সপ্তাহের ছুটির দিনগুলি বাদে বাকি দিনের ঘুমানোর রুটিন।
এই পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, যেসব মেয়েরা রাতে প্রতিদিন দেরিতে ঘুমাতে যায় তাদের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ কম করে হলেও ০.৫৮ সেন্টিমিটার বাড়ার আশঙ্কা থাকে।শুধু তাই নয়, এর সাথেই বডি ফ্যাট ০.১৬ কেজি প্রতি মিটার স্কয়ার হিসেবে বেড়ে চলে।পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়েছে সেইসব ছেলেমেয়েদের সোশ্যাল জেট ল্যাগ অর্থাৎ তাদের সপ্তাহের কাজের দিনগুলির ঘুমানোর অভ্যেস বনাম ছুটির দিনে ঘুমানোর অভ্যেস।দেখা গেছে, তাদের মধ্যে যারা শুধু ছুটির দিনগুলিতে দেরি করে ওঠে তাদের ক্ষেত্রে বলা হয় তাদের সোশ্যাল জেট ল্যাগ অনেক বেশি হাই। গবেষকরা জানিয়েছেন, সোশ্যাল জেট ল্যাগের প্রতিটি ঘন্টা কোমরের মাপ ১.১৯ সেন্টিমিটার ০.৪৫ সেন্টিমিটার প্রতি মিটার স্কয়ার বডি ফ্যাট বৃদ্ধির সাথে সরাসরি যুক্ত।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ওজন বৃদ্ধির জন্য স্লিপিং প্যাটার্নকে দায়ী করা হলেও এর সাথে যুক্ত থাকে প্রচুর বহিরাগত ফ্যাক্টর যেমন স্লিপ ডিউরেশন, ডায়েট, ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি প্রভৃতি।গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফ্যাক্টরগুলি মেয়েদের ওজন বৃদ্ধির সমস্যাকে ত্বরান্বিত করলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা তৈরী করে না।এই পরীক্ষার শেষে গবেষকরা জানিয়েছেন, স্লিপ শিডিউলকে ঠিক করলেই ওজন বৃদ্ধির সমস্যা অনেকটাই বশে চলে আসবে।
কথায় আছে, "আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ, মেকস এ ম্যান হেলদি ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ"- ছোটবেলায় পড়া এই ছড়াটি অনেকক্ষেত্রেই আমরা অবহেলা করে থাকি। কিন্তু সম্প্রতি গবেষণা থেকে উঠে আসা তথ্য কি সেই কবিতাটিকেই আরেকবার মনে করিয়ে দিলো না?