‘টাইপ রাইটার সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। ছোট-ছোট গ্রামে স্কুল তৈরির অনুমোদন মিলত প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। শুধু স্কুল পত্তনেই নয়, শিক্ষক নিয়োগও হয়ে যেত প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। গ্রামে শিক্ষার প্রসার ঘটাতেই তাঁর যাবতীয় তৎপরতা’।
তিনি টিএম কালিয়ান্নান। ২০২০- এর জানুয়ারীতে শতবর্ষে পা দিলেন টিএম কালিয়ান্নান। স্বাধীন ভারতের প্রথম লোকসভা অধিবেশনের শেষ জীবিত সদস্য। সংবিধানের খসড়া রচনায় তিনি ছিলেন অন্যতম সহায়ক।
গান্ধীজীর সঙ্গে দেখাটাই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল তাঁর জীবনের। লোয়ালা কলেজের একটি অনুষ্ঠানে তেরঙ্গা ওড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয় ছাত্র প্রতিনিধিদের।
কলেজ কর্তৃপক্ষের আচরনের প্রতিবাদে ৮ সদস্যের এক ছাত্র প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে গুজরাটের সবরমতীতে যান কালিয়ান্নান। দশদিন ছিলেন সেখানে।
কিন্তু গুজরাট থেকে তিনি যখন তামিলনাড়ু ফিরলেন তিনি যেন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ।
গান্ধীজী তাঁকে বলেছিলেন দশদিন তাঁর আশ্রমে থাকতে আর সেখানকার জীবনযাত্রা দেখতে। তাতেই আমূল পরিবর্তন ঘটে একুশের যুবার।
সেই শুরু। মহাত্মা গান্ধীর দর্শন থেকে কোনদিন বিচ্যুত হননি তিনি।
১৯২১ সালে তামিলনাড়ুর আক্কারাইপাত্তি-তে জন্ম হয়। খুব ছোটবেলায় গ্রামের জমিদার তাঁকে দত্তক নিয়েছিলেন।
স্কুলে গুণী ছাত্র ছিলেন। ইংরেজী সাহিত্যের প্রতি সহজাত আগ্রহ তাঁকে আলাদা করে চিনিয়েছিল। কলেজের পড়াশোনাও ইংরেজী সাহিত্যে।
পড়াশোনা শেষ হতেই জড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক আন্দোলনে।নেহাত শখের বষে নয়, রাজনীতিই হয়ে ওঠে ধ্যান জ্ঞান। দেশ তখন পরাধীন। তাঁর মতো বিশ্বস্ত সৈনিকের দরকার ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনকে তীব্রতর করে তোলার জন্য।
১৯৪৩ সালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। গণপরিষদে নির্বাচিত হন। তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী সদস্য। ড. বি আর আম্বেদকার, কামরাজ এবং রাজাজি’র সঙ্গে সংবিধানের খসড়ার রচনার কাজে তিনিও যুক্ত ছিলেন।
শতবর্ষেও মনে করতে পারেন সেদিনের কথা। কালিয়ান্নান বলেন, ‘ সে সব অতীত সব অর্থেই সোনালী ছিল। জাতির জীবনে তখনও দুর্নীতি প্রবেশ করেনি’।
এখনও প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়েন তিনি। দেশের কোন প্রান্তে কী হল সেসব খবরও জানতে চান। তবে আশাহত হন। এখনও স্বপ্ন দেখেন দেশ বদলের।
বর্ষীয়ান এই মানুষটি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উন্নতি অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি।কিন্তু আশা ছাড়তে নেই। মানুষ ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়। দেশের মানুষও নেবে’।