ভারতীয় ক্রিকেটের এক বর্ণময় চরিত্র। দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে শুরু করে লবি'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ব্র্যাডম্যান থেকে শুরু করে বহু নামজাদা ব্যাটসম্যানকে আউট করা। করেছেন উইকেট কিপিংও। তিনি লালা অমরনাথ।
কতগুলো গল্প মনে হলেও সত্যি ঘটনা বললে লালার ক্রিকেটীয় বর্ণময়তা সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা দেওয়া যাবে।
একটি ইন্টারভিউয়ে লালা অমরনাথকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁর সময় ওয়ান ডে ক্রিকেট থাকলে, দুরন্ত ফিল্ডিং, স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কী করতেন?"
লালা বলেছিলেন, "নো প্রবলেম, সি কে নাইডু আর মুশতাক আলি ওপেন করতেন।আমি নামতাম ওয়ান ডাউনে আর বাকি দল শপিং করতে গেলে কোনও অসুবিধা হতো না"!
১৯৪৬ এর ইংল্যান্ড সফর। সমারসেটের সঙ্গে খেলায় দুর্দ্ধর্ষ মারকুটে ব্যাটসম্যান হ্যারল্ড গিম্বলেটের বিরুদ্ধে লালা অমরনাথ মেডেনের পর মেডেন ওভার নিয়ে যাচ্ছেন। খানিকক্ষণ পর গিম্বলেট এসে অমরনাথকে জিজ্ঞেস করলেন, "টেল মি, ডু ইউ নেভার বোল আ হাফ ভলি?"
অমরনাথের জবাব, "অফ কোর্স আই ডু, আই বোল্ড আ কাপল্ ইন নাইনটিন ফর্টি টু"! আর হেলমেট পড়া নিয়ে বলতেন ওটা ক্লাউনরা পরে। এও বলতেন হেলমেট পরে কাপুরুষেরাই। আসলে বিনা হেলমেটে লিন্ডওয়াল, মিলারকে ঠেঙানো ব্যাটসম্যানের হেলমেট সম্বন্ধে এমন ধারণা না হওয়ার কিছু নেই।
লবির বিরুদ্ধে লালা:
১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজে অংশ নেওয়ার অভিযোগে দলনায়ক ভিজিয়ানগরমের মহারাজকুমার বিতর্কিতভাবে তাঁকে দেশে ফেরৎ পাঠান। লাল অমরনাথ, সি কে নায়ডু ও বিজয় মার্চেন্টেকে নিয়ে প্রতিবাদ করেন। ভিজি তোষামোদের মাধ্যমে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন, এই অভিযোগ তোলেন। কোনও ভুল কথা বলেননি লালা।
মাঠে ভিজি'র দূর্বল অধিনায়কত্ব ব্রিটিশ গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছিল। লর্ডসে মাইনর কাউন্টিজের বিপক্ষে ঘটনার সূত্রপাত হয়। দলীয় ম্যানেজার মেজর জ্যাক ব্রিটেন-জোন্স প্রথম টেস্ট না তাঁকে খেলিয়ে দেশে ফেরৎ পাঠান। লাভ হয়নি। তিনিই পরে হন স্বাধীন ভারতের প্রথম অধিনায়ক।
১৯৪৭-৪৮ সিরিজে ডন ব্র্যাডম্যানের প্রবল শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত হারে ০-৪এ । কিন্তু অধিনায়কোচিত নৈপুণ্য এবং বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে নেন ডনের। সেবার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৪৪, ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ২২৮, কুইন্সল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৭২ এবং তাসমানিয়ার বিপক্ষে ১৭১ রান করেন। জীবনে একবারই ডন হিট উইকেট আউট হন। বোলার ছিলেন লালাই।
উইকেটকিপার লালা:
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলা। এদিকে চোটের জন্য খেলতে পারবেন না দলের প্রধান উইকেটকিপার প্রবীর সেন, অর্থাৎ পি সেন ট্রফি যার নামে হয়, তিনি। দিব্যি কিপিং করলেন লালা অমরনাথ। শিকার পাঁচ ব্যাটসম্যান।
কিছু পরিসংখ্যান:
দীর্ঘ ১৯ বছরে মাত্র ২৪টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তার মধ্যে ১৫টিতেই অধিনায়ক লালা। করেছেন ৮৭৮ রান এবং নিয়েছেন ৪৫ টি উইকেট। এটা দিয়ে লালাকে বিচার করলে ভুল হবে। ভাবুন সেই সময়ের ভারতীয় ক্রিকেটে ব্যাটে বলে সফল ক্রিকেটার। ১৯৪৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে ৫০ রান এবং ৫ টি উইকেট নেন যার মধ্যে লেন হাটন, সিরিল ওয়াসব্রুক, ডেনিস কম্পটন, ওয়ালি হ্যামন্ডের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যাটসম্যানরা ছিলেন। পরের ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে আবার ৫ উইকেট পান যার মধ্যে আবারও শিকার কম্পটন ও হ্যামন্ড। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০৪২৬ রান আর ৪৬৩ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর দুই অবিশ্বাস্য বোলিং কীর্তি:
১) ১৯৩৮-৩৯ সালে সাদার্ন পাঞ্জাবের হয়ে সিন্ধের বিপক্ষে ৪ উইকেট নেন ২ রান দিয়ে
২)১৯৫৮ সালে রেলওয়েজের হয়ে পাতিয়ালার বিপক্ষে ০ রানে ৪ উইকেট নেন।