সময়টা পঞ্চাশের দশক। সবে স্বাধীন হয়েছে দেশ। প্রধানমন্ত্রীর পদে পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু। ২০০ বছর ইংরেজ শাসনে ক্ষত বিক্ষত দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে।
নেহেরু দেখলেন দেশের অর্থের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে বিদেশি প্রসাধনী আমদানিতে। ব্রিটিশ আমলে পণ্য আসত ইউরোপ থেকে। এখন দেশ স্বাধীন হলেও উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের অন্দরমহলে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই মহিলাদের প্রসাধনী পণ্যের জন্য।
তাই নতুন পথ খুঁজতে লাগলেন তিনি। ডেকে পাঠালেন বন্ধু-শিল্পপতি জে.আর.ডি টাটাকে। মেয়েদের প্রসাধনী কম খরচে এদেশে বানানো সম্ভব? জিজ্ঞাসা করলেন তাঁকে। টাটা গোষ্ঠীর জে.আর.ডি জানালেন, ‘অবশ্যই সম্ভব’। বিষয়টাকে জেআরডি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিলেন।
এই মুলাকাতের আটমাসের মাথায় যাত্রা শুরু করল দেশের প্রথম স্বদেশী প্রসাধনী। কী হবে নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম? এ শুধু প্রতিষ্ঠান নয় দেশে তৈরী প্রথম প্রসাধনী ব্র্যান্ড।
নাম নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে করতে জে.আর.ডি টাটার মাথায় আসে নিজের দেখা এক ফরাসী অপেরার কথা। ভারতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রেরণা তৈরী হয়েছিল অপেরা। ফরাসী দেশের ভীষণ জনপ্রিয়। দেশে তৈরী পণ্য, কিন্তু শুনলে মনে হবে বিদেশি- এমন ভাবনা থেকেই ব্র্যান্ডের নাম রাখার পরামর্শ দিলেন তাঁর দুই বন্ধু রবার্ট পিগেট আর রনিয়র। ফরাসী অপেরার নামটাই হয়ে গেল নতুন প্রসাধনী ব্র্যান্ডের নাম ‘ল্যাকমে’। ভারতীয় মানে ‘লক্ষ্মী ’।
দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় বাজারে আসতেই দারুণ জনপ্রিয় হল ‘ল্যাকমে’। রেখা-হেমা মালিনী থেকে শুরু করে বহু বলিউড তারকা ল্যাকমের বিজ্ঞাপন মুখ হয়েছেন। ভারতের প্রথম সুপার মডেল শ্যামলী ভার্মা ঘরে ঘরে পরিচিতই ছিলেন ‘ল্যাকমে গার্ল’ নামে।
১৯৯৩ সালে ল্যাকমে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার। ১৯৯৬ সালে তাদের কাছে এই ব্র্যান্ডের অর্ধেক শেয়ার চলে যায়। ক্রমে আরও ২ বছর পরে ১৯৯৮ সালে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের কিনে নেয় ল্যাকমেকে। এখন সারা পৃথিবীর প্রায় ৭০ টি দেশে পাওয়া যায় ল্যাকমের প্রসাধনী। ৩০০টিরও বেশি প্রোডাক্ট চালু রয়েছে সারা দেশে। ৭০ বছরে পা দিল বহুল জনপ্রিয় এই ল্যাকমে।
তথ্য সূত্রঃ টাটা সেন্ট্রাল আর্কাইভ