সদ্য শেষ হয়েছে দুর্গাপুজো। চোখের জলে বিদায় নিয়ে উমা পাড়ি দিয়েছে কৈলাসে। কিন্তু রেখে গিয়েছে তার কন্যা লক্ষীকে। কারণ দুর্গাপূজো শেষ হবার কিছুদিন পরেই যে বাঙালির ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় লক্ষ্মী পূজার। চারিদিক আবার ঝলমল করে ওঠে আলোয়। রাঙা পায়ের আলপনায় মা আসেন ঘরে। কিন্তু লক্ষ্মী পূজায় এই আলপনা দেওয়ার চল কেন? এই নিয়ম বা রীতির প্রচলন কী উদ্দেশ্য হয়েছিল? এর নৈপথ্যে রয়েছে এক মজাদার গল্প।
এমন কোন বাঙালি বাড়ি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে লক্ষ্মীপূজো হয় না। ওইদিন পাঁচালী পড়ে আরাধনা করা হয় মায়ের। পুজোর দিন সারা বাড়ি আলপনার কলকায় ভরে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে সাবেকি আলপনা থেকে সরে আসছে ব্যস্ততা প্রিয় মানুষ। তাই হাতে এঁকে আলপনা দেওয়ার চল সীমিত হয়ে আসছে।
পূর্বে প্রত্যেক বাড়িতে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা আঁকা হতো। যার রং হতো দুধ সাদা। পরবর্তীকালে চালের গুড়োর স্থান অধিকার করে খড়িমাটি৷ কিন্তু কালের সাথে সাথে আলপনার এই রীতিকেও আধুনিকতার মোড়কে মুড়ে ফেলা হয়েছে। হাতে আঁকা আলপনার জায়গায় স্থান পেয়েছে প্লাস্টিকের স্টিকার অথবা রঙিন রং তুলি।
কিন্তু চালের গুড়ো দিয়ে আলপনা আঁকার নৈপথ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। মনে করা হয়, প্রসাদী ফল-মূল ও মিষ্টি পোকামাকড় ও পিপড়ের হাত থেকে বাঁচাবার জন্যই এই প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল। পুজোর আয়োজনে দীর্ঘ সময় ধরে প্রসাদ সাজানো থাকে ঠাকুর ঘরে। ফলে ঘরের পোকামাকড় ও পিঁপড়েরা সেই প্রসাদ ইচ্ছে মতন লুট করতে থাকে। কিন্তু আলপনা আঁকার মূল সরঞ্জাম চালের গুঁড়ো। ফলে সেই লোভে পিঁপড়েরা মা লক্ষ্মীর প্রসাদের প্রতি আর আকর্ষিত হবে না। তাই সেই দিক থেকে তাদের দৃষ্টি ফেরানোর জন্যই এই নিয়মের প্রচলন।
কিন্তু বর্তমান সময় এই ধরন থেকে অনেকটাই সরে এসছে বাঙালি পরিবার। প্লাস্টিকের তৈরি আলপনা স্টিকারের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে আলপনা আঁকার সৌন্দর্য ও উদ্দেশ্য।