ঠাকুরের মূর্তি তৈরিতে কুমোরটুলির জুড়ি মেলা ভার। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের নানা দেশে কুমোরটুলির মূর্তি পাড়ি দিয়েছে বহু বছর আগেই। দুর্গাপুজোতে তো বটেই, সরস্বতী পুজোতেও সর্বাধিক চাহিদা থাকে কুমোরটুলিতে তৈরী মূর্তির। সরস্বতী পুজোর দোরগোড়ায় যখন চারপাশে জমে উঠেছে ঠাকুরের মূর্তির বাজার, সেখানেও সর্বাধিক চাহিদার ব্র্যান্ডিং-এ এগিয়ে রয়েছে কুমোরটুলিতে তৈরী সরস্বতী ঠাকুর।
রং-সাজসজ্জা, আকার বিন্যাসে সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন কুমোরটুলির তৈরী সরস্বতী মূর্তি। কিন্তু সেখানকার মূর্তির চাহিদা এগুলোর ওপরেই নির্ভর করেনা। বরং এত বছর ধরে কুমোররা যেভাবে সিদ্ধ হস্তে মূর্তি বানিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তা কেবল একনামে কুমারটুলিকেই মনে করিয়ে দেয়। এই নামেই মূর্তি এখন বিকোচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। যেমনটা মিলছে রবীন্দ্র সরণিতেও। কুমোরটুলিতে না যেয়েও কুমোরটুলি থেকে নিয়ে আসা মূর্তি বিক্রয় হচ্ছে সেখানে। তার চাহিদাও বেশ। কুমোরটুলি থেকে সত্যিই এই মূর্তিগুলো এসেছে তো ? প্রশ্ন হাঁকছে ক্রেতারা, জবাবে-এই রকম চোখ কুমোরটুলি ছাড়া আর মিলবে কোথায়, সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
কুমোরটুলির মূর্তি ছাড়াও শহরের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও আসছে সরস্বতী মূর্তি। চেতলা থেকে মূর্তি এনে বিক্রী হচ্ছে বাগবাজারে। এছাড়াও মূর্তি এসেছে দমদম,পানিহাটি থেকে। কিন্তু বিক্রেতাদের মুখে 'কুমোর টুলি' থেকে মূর্তি এসেছে বললেই মূর্তির ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়ে যাচ্ছে অনেক গুণে| সেখানকার একজন বিক্রেতা বিশ্বজিৎ সিং-এর মতে কুমোরটুলির মূর্তির প্রতি মানুষের একটা মোহ রয়েই গেছে। কিন্তু চেতলার মূর্তি আর কুমোরটুলির মূর্তি পাশাপাশি রাখলে কোনটা কোথাকার সেটা আদৌ ক্রেতারা হয়ত বুঝতেই পারবেননা বলে জানান তিনি। আর সেটাকেই কাজে লাগিয়ে ব্যবসার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা।
বিধান সরণির আরেক মূর্তি বিক্রেতা জানান, কুমোরটুলিতে ছোট সরস্বতী ঠাকুরের মূর্তি তৈরী হয় না। কিন্তু সব ক্রেতারা সে বিষয়ে যেহেতু অবগত নন, সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন এই মরশুমী মূর্তি বিক্রেতারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিক্রেতারা ধরেই নিচ্ছেন মূর্তি গুলো কুমোরটুলি থেকে তৈরী। কিন্তু ক্রেতারা মুখে জিজ্ঞেস করলেই সত্যিটাও বলে দিচ্ছেন অনেকেই।
কুমোরটুলির মৃৎ শিল্পীরাও অনেকে জানিয়েছেন, ক্রেতারা মূর্তি কেনার সময় অনেকে ভেবেই নেন মূর্তি তৈরী হয়েছে কুমোরটুলিতেই। সে ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং সুবিধার থেকে আর্থিক ভাবে অসুবিধাও হচ্ছে তাদের। একজন প্রবীণ কুমোরটুলির শিল্পী স্বপন পাল জানিয়েছেন শহরের স্কুল কলেজগুলোয় সরস্বতী মূর্তি যায় কুমোরটুলি থেকেই। কিন্তু বাড়ির পুজোতে সাধারণত কুমোরটুলির মূর্তি ব্যবহার হয়না আকারের কারণেই। এ জন্য শহরের অন্যান্য প্রান্ত থেকে খোদ কুমোরটুলিতে অনেকে আকারে ছোট সরস্বতী মূর্তি বিক্রয় করতে আসে। তাতে দাম স্বাভাবিক ভাবেই বেশি পেয়ে থাকেন এসব বিক্রেতারা।