লাল শালুতে মোড়া মাটির হাঁড়ি। ধার থেকে উঁকি দিচ্ছে সিলভার বা প্লাস্টিকের ছোট ছোট চোঙাকৌটো। লাল। সবুজ। হলুদ কিংবা শুধুই স্টিল রঙের। হাঁড়ি আসলে ঘুমতা-ফিরতা রেফ্রিজারেটর।
মাটির হাঁড়ি ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর কানায় কানায় জমাট বাঁধা বরফ। তলায় থাকে চোঙা কৌটো। আঠা বন্ধ মুখ। ভিতরে বরফে জমানো গুঁড়ো দুধ আর চিনি আর নুন। হাল্কা হলুদ দেশি আইসক্রিম। কুলফি মালাই।
কৌটোর গায়ে হাতের তালুর চাপ দিলে আলগা হয়ে যায় জমে থাকা আইসক্রিম। ছুরির টানে আলগা। চাক-চাক করে কেটে শালপাতায় মুড়ে হাত ফিরি। মুখ ভরে যায় এলাচের গন্ধে। শিরশির করে ওঠে দাঁত। জিভে-গলা মালাইয়ে ভাঙা বাদামের রেশ। সিদ্ধি মালাই-ও মেলে। সিদ্ধি বেটে দুধের সঙ্গে মেশান। সেই কুলফি জংলা সবুজ।
বিক্রি হয় মাথায়-মাথায়। সাদামাটা অলি-গলির মোড়।
ব্র্যান্ডের জৌলুস নেই। শিরাপ-সেমাইয়ের বাহার নেই। তবু গ্রীষ্মের দুপুর মানে ‘কুলফিওলা’র ডাক।
বহু বছর তারা এই শহরের পথে।
রবি ঠাকুর ‘ছেলেবেলার কথা’য় লিখেছেন, চৈত-বৈশেখ মাসে রাস্তায় ফেরিওয়ালা হেঁকে যেত, ‘বরীফ’। হাঁড়িতে বরফ দেওয়া নোনতা জলে ছোট ছোট টিনের চোঙে থাকত যাকে বলা হত কুলফির বরফ, এখন যাকে বলে অইস বা আইসক্রিম।
যতদূর জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে মোগলদের হাত ধরে কুলফি মালাই এর প্রচলন হয়। আইন-ই-আকবরি তে উল্লেখ আছে। ‘পাহাড়ি’ বরফ নুন দিয়ে জমিয়ে রাখা হত। সেই বরফ আর দুধ দিয়ে কুলফি তৈরি হত। স্বাদ বাড়াতে তার মধ্যে পেস্তা আর জাফরান মেশানো হয়।
কুলফির কৌটো অর্থাৎ মল্টগুলো এমনভাবে তৈরি বরফের মধ্যে থাকলেও দুধ বরফের দানায় পরিণত হত না কোনওভাবেই।
‘কুলফি’ উর্দু শব্দ। পারসি ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘ঢাকা দেওয়া কাপ’।
ভারত ছাড়াও মায়ানমার, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যে দেখা মেলে।
এখনও দক্ষিণ এশিয়ার সব চেয়ে জনপ্রিয় ‘ট্র্যাডিশনাল ডেজার্ট কুলফি মালাই’। অনেক পিছনে পড়ে বিদেশি আইসক্রিম।