কালী কথা: কেওড়াতলার কৃষ্ণ কালী

রটন্তী কালী পুজো, দীপান্বিতা কালী পুজো, ফলহারিণী কালী পুজো, বছর ভর একাধিক বিশেষ বিশেষ তিথিতে পূজিতা হন দেবী কালী। বছরজুড়ে যে'কটি তিথির কালী পুজো বিখ্যাত, তার মধ্যে অন্যতম হল রটন্তী কালী পুজো। এর মাহাত্ম্য অসীম। সদ্যই রটন্তীকালী পুজো পালিত হল বাংলার দিকে দিকে। মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী কালীর পুজো করা হয়। এটিই একমাত্র কালী পুজো যা অমাবস্যায় না-করে চতুর্দশীতে পালন করা হয়। আদপে এদিন কৃষ্ণকালীর পুজো হয়। বছরের এই একটি তিথিতেই কালীকে কৃষ্ণ রূপে আরাধনা করা হয়। তবে বাংলায় এমনও এক মন্দির আছে, যেখানে বছরভর কৃষ্ণকালীর আরাধনা চলে।

কলকাতার কালীঘাট-চেতলা অঞ্চলে বিখ্যাত কেওড়াতলা মহাশ্মশানের অনতি দূরেই অবস্থিত এই কৃষ্ণকালী মন্দির। মন্দিরের ঠিকানা ১১৩ কেওড়াতলা মহাশ্মশান রোড, কলকাতা ২৬। প্রতিমায় কৃষ্ণ ও কালী যুগপৎ অবস্থান করেন। শাক্ত ও বৈষ্ণব মতের মহামিলনের সাক্ষী এই মন্দির। মন্দিরের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে আদি গঙ্গা।

কেওড়াতলা শ্মশানঘাটের যে অংশে আগে কাঠের চুল্লীতে শবদাহ করা হত, সেখানেই শ্রীশ্রী কৃষ্ণকালী মন্দির গড়ে উঠেছে। আজ থেকে দেড়'শো বছর আগে জনৈক আনন্দ ঋষি নামে এক সাধক মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি এই মন্দিরে বসে কৃষ্ণ কালী মায়ের সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বলে জানা যায়। অনাথানন্দ নামেও আর একজন সাধক এখানে ছিলেন বলে জানা যায়। তিনিও সাধনা করেছেন। দুই সাধকের কথা মন্দির গাত্রে প্রস্তরফলক খোদাই করা রয়েছে।

দেবী বিগ্রহ শ্যামবর্ণা। তিনি চতুর্ভুজা। দেবীমূর্তিতে মাহেশ্বরী এবং শ্রীহরি যুগপৎ বিরাজ করেন। দেবী দুই হাতে খড়্গ ও বরাভয়। অন্য দুটি হাতে বাঁশি থাকে। মায়ের গলায় মুণ্ডমালা ও ফুলের মালা। মন্দিরের গর্ভগৃহে পঞ্চমুণ্ডের আসনে অধিষ্ঠান করেন দেবী কৃষ্ণকালী। এই মন্দিরে প্রত্যেক পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে বিশেষ পুজো হয়। এছাড়া কার্তিক অমাবস্যায় দীপান্বিতা কালী পুজো মহাধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। রটন্তী কালীপুজো উপলক্ষ্যেও দেবীর বিশেষ পুজো হয়। উৎসব চলে। প্রতি দিন সকাল আটটা থেকে দশটা এবং সন্ধ্যা ছ'টা থেকে আটটা পর্যন্ত মায়ের মন্দির খোলা থাকে। এছাড়াও কৃষ্ণকালীর নিত্য পুজো হয়। কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে বার্ষিক পুজো হয়। ভাদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে কৃষ্ণকালী মায়ের বাৎসরিক পুজো হয়। শ্রীশ্রী কৃষ্ণকালী মন্দির সোসাইটি এই মন্দির পরিচালনা করে।