সেরা পরিচালক হোন বা সেরা অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আজও ‘মাটি’র মানুষ

২০১২-এ ‘শব্দ’। ২০১৪-এ ‘নির্বাসিত’ আর ‘ছোটদের ছবি’। ২০১৬-এ ‘বিসর্জন’। ২০১৭-এ ‘নগরকীর্তন’। ২০১৯-এ ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’

জাতীয় পুরস্কার তাঁর কাছে যেন রোজের ব্যাপার। আলাদা করে চমক জাগায় না খবরের কাগজের হেডিং-এ, বরং চমক লাগে না পাওয়াতে! কারণ পরিচালকের নাম যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

তাঁর ছবি মানেই অন্যরকম। বিষয় নির্বাচন, নির্মাণ, শৈলী সব কিছুতেই ভীষণভাবে আন্তর্জাতিক। যেভাবে কেউ ভাবতে পারেন না, ভাবতে পারেন তিনি।

বলিষ্ঠ বিষয়, কিন্তু মানবিক অনুভূতিতে উজ্জ্বল। ছবির চরিত্ররা রক্ত-মাংসের। তারা কেউ অতিমানব নয়। যুদ্ধ করে। হারে। কষ্ট পায়। সংঘাতে জড়ায়। ভেঙেচুরে যায় দ্বন্দে। শেষ পর্যন্ত জিত হয় জীবনের। বেঁচে থাকার। সে সব মিলিয়েই ‘কৌশিক গাঙ্গুলীর ছবি’

দর্শকরা অপেক্ষা করে থাকে তাঁর ছবির জন্য। হলমুখী হয়। অন্যরকম ভাবনার ছবিও পার হয়ে যায় বাণিজ্যতরী।

 

KaushikGanguly1

 

এই সময়ের অন্যতম সেরা পরিচালক তিনি। যদি লেখক হতেন তাহলেও বোধহয় প্রথম সারির উজ্জ্বল তারকাই হতেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর ছবির প্রাণ ছবির সংলাপ। কানে লেগে থাকে। সংলাপহীন দৃশ্যরা লেগে থাকে চোখে।

জীবনে প্রথমবার স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন, তখন বয়স সবে চোদ্দ। ক্লাস নাইনে পড়তেন। স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পার হয়েও ছবির ইচ্ছেটা কিন্তু থেকেই গিয়েছিল। বি.এড শেষ করে একটা স্কুলে চাকরি পান। বছর আটেক স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায়। পরে ছেড়ে দেন সে চাকরি। স্কুলে পড়াতে পড়াতে সিনেমা হয় না, ভেবেছিলেন লক্ষ্যটা একদিকেই থাক। ছোটপর্দা দিয়ে শুরু হল ছবি-জীবনের জার্নি।

ছ’ছটা জাতীয় পুরস্কার, পনেরোটার বেশি ছবি পরিচালকের কেরিয়ারে। তবু নিজেকে সিরিয়াসলি ফিল্মমেকার ভাবতে রাজী নন। নিজেকে বলেন, ‘স্টোরি–টেলার’ মানে ‘গল্প-বলিয়ে’। ক্যামেরায় গল্প বলাই তাঁর কাজ। প্রতিবার তাই নতুন নতুন গল্প। তাঁর গল্পের ঝুলি অফুরান...নিজের কাছে নিজে এই তাঁর প্রাপ্তি।

শুধু পরিচালক পরিচয়েই শেষ হয়ে যায় না তাঁর পরিচয়। তাঁর পরিচালনার ছবিতে যেসব অভিনেতা অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন তাঁদের ভাষায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এই সময়ের সেরা অভিনেতা। একথা বললেই এক ঝলকে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শঙ্কর মুদি আর গণেশ মন্ডলের মুখখানা।

 

KaushikGanguly2

 

অতিমারীর জেরে আর্থিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে বহু মানুষ। সময়ের অন্ধকারে ভেসে বেড়ায় তাদের মুখ।  কবে যেন মানুষের মুখে মুখে তারা সবাই হয়ে উঠে ‘শঙ্কর মুদি’। পরিস্থিতির বৈকল্য বোঝাতে আর কোনও উপমার দরকার পড়ে না।

বাংলা ছবির জগতে বাঁক বদলে দেওয়া এই পরিচালকের জন্ম কলকাতায়। আজকের দিনে। সন ১৯৬৮ তে। সত্তরের উত্তাল সময়ে তাঁর বেড়ে ওঠা। রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কবিতা আর গল্প তাঁকে কখনও সঙ্গছাড়া করেনি। কৌশিক কবিতা দিয়ে গল্প বলেন। সেই গল্পের বুননে ভরে ওঠে ক্যামেরা আর দর্শকদের চোখ।

তাঁর ছবি কখনও অলীক কাব্য বোনে। সব চরিত্র বাস্তব থেকে উঠে আসা। তাদের প্রতিটা যাপন সত্যি। মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিনেমা হয় না। জাতীয় পুরস্কার জলভাত করে ফেললেও তাই বদলায়নি তাঁর জীবন। সেরা পরিচালক হোন বা সেরা অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আজও মাটি ছুঁয়ে থাকা এক মানুষ। বন্ধু বৎসল। জীবন বৎসল।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...