‘কটা জামা হল’-পুজোর শপিং কমপ্লিট?

ওওও...আয় রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে

ট্র্যাফিক সিগন্যালে বেজেই চলেছে গানখানা। ভিড় বাসে স্কুল ফেরত কচি মুখ বছর আশির দাদামশাইকে প্রশ্ন করে চলেছে নাগাড়ে...

পুজোর গন্ধটা কেমন গো?

দাদামশাই বলে, ‘এমা তুমি তাও জানো না!’

ওই যে দুগগা মা আসছে ওটাই তো পুজোর গন্ধ। নাররাসারি ক্লাসের নাতনি সে উত্তর ঘ্যাঁচ করে কেটে দিয়ে বলে, ‘মা দুগগা কী জ্যান্ত যে তার গায়ে গন্ধ থাকবে?’

দমবন্ধ জ্যামে বৃদ্ধের উত্তর শোনার জন্য কান পেতে থাকে চারপাশ। অশীতিপর মানুষটি বলেন, ‘হ্যাঁ গো মা জননী, মা তয় জ্যান্তই হয় গো’

সত্যি সত্যি, বলুন তো দুর্গা পুজোর গন্ধটা যে আসলে কী?

এক কথার প্রশ্ন হলেও উত্তরটা এক কথায় হবে না। 

কেউ বলে শিউলি, কেউ বলে ছাতিম আর কেউ বলে মা দুগগার গায়ের গন্ধটাই তো পুজোর গন্ধ। এক কথায় উত্তর দেওয়া যায় না। তবে পুজো মানে নতুন জামা, নতুন জুতো, নতুন সব কিছুর সুবাস সব মিলিয়ে হয়ে ও ঠে পুজোর গন্ধ। আসলে পুজোর আনন্দের গন্ধ।

পুজো মানে নতুন জামা। চারদিন রোজ রোজ নতুন। সবার সঙ্গে সেই আনন্দ ভাগ করে নেওয়া।

আষাঢ়ের মেঘে ফাঁক গলে যেই না রোদ্দুর উঠতে শুরু করেছে অমনি শুরু হয়ে যায় দিন গোনার হিসেব। বাড়িতে নতুন বৈশাখের ক্যালেন্ডার আনলেই বাঙালি গৃহস্থ দেখে নেয় পুজোর দিনক্ষণ। তারপর শুরু হয় হিসেব। কার জন্য শাড়ি, কার জন্য জামা?

এখনও হয় সে হিসেব। অনলাইন আর মলে টহল চলে। সেসব বাদ দিয়েও আছে বিস্তীর্ণ জীবন। ফুটপাতে হেঁটে, শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত টহল দিয়ে চলে পুজোর বাজার। দরদাম, হইচই, কেনাকাটির শেষে রোল সে কী জমজমাট ব্যাপার!

সে সব ভিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে ‘ময়না পাড়ার মেয়ের বাবা’। নতুন জামা ফ্রক কিনবে সাধ্য কই? ভিড় গুনতে গুনতে অপেক্ষা করে চলেন তিনি। ষষ্ঠী কিংবা সপ্তমীতে হাতে মিলতেও পারে কষ্ট ঘামের কটা টাকা। উৎসবের ঢাক বেজে উঠলে মফস্বলের ঘরে ফিরে গিয়ে হবে কেনাকাটা।

আশ্বিনের মাঝে বাজনা বেজে উঠলে নতুন জামা, ব্র্যান্ডেড ড্রেস আর শপিং আর বহুমূল্য পুজোর সাজের চমকের মধ্যে ও বুকে বেজে ওঠে কবেকার সেই কবিতাখানা-

আশ্বিনের মাঝামাঝি         উঠিল বাজনা বাজি,

পূজার সময় এল কাছে।

মধু বিধু দুই ভাই            ছুটাছুটি করে তাই,

আনন্দে দু-হাত তুলি নাচে।

পিতা বসি ছিল দ্বারে,        দুজনে শুধালো তারে,

"কী পোশাক আনিয়াছ কিনে।'

 

দীন দুঃখীর ঘরে পুজোর গন্ধ কীভাবে আসে সে খবর কেই বা রাখে। তবু সব আয়োজন মিথ্যে হয়ে যায় সে মুখে আঁধার থাকলে। নতুন জামার আনন্দ ভাগ করে নিতে সকলের সঙ্গে। বাহুল্যের উল্টোপিঠে যতই যৎসামান্য হোক তার আয়োজন। কবি তাই গান লেখেন

কাঁদছ কেন আজ ময়না-পাড়ার মেয়ে?

নতুন জামা ফ্রক পাওনি বুঝি চেয়ে?

আমার কাছে যা আছে সব তোমায় দেব দিয়ে।

আজ হাসি-খুশি মিথ্যে হবে তোমাকে বাদ দিয়ে।

আলোর চমকের উল্টোদিকে জেগে থাকে তাদের মুখ। জামায় লুকনো রিফুর ফোঁড়, গঞ্জের হাটে কেনা ছিটের জামা পরেও পুজো আসে ঘরে। জামায় নয়, পুজোর আনন্দ মনে আর জাগিয়ে রাখা স্বপ্নের বিশ্বাসে। একদিন ঠিক সুদিন ফিরবে ঠাকুর...দয়ার দান আর বাঁচিয়ে রাখা পুরনো জামায় নয়, নতুন জামার আনন্দেই ঘরে আসবে ওদের মা দুগগা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...