ছবির শুটিং এর প্রথম দিন গাড়িতে নিজে তাঁকে নিতে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায় । উত্তমকুমার তাঁর টানে বারবার ছুটে আসতেন সন্ধের গ্র্যান্ডে । অমিতাভ বচ্চন তাঁর জন্মদিনে নেমন্তন্ন করেছিলেন।
একসময় কলকাতায় সন্ধে নামত তাঁরই নামে। ফারপো, গ্র্যান্ডের ফ্লোরে পরীর জলসা। হার্টবিট বন্ধ করে দেওয়া লাস্যে মহানগরকে মিনিটে স্তব্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন তিনি। কলকাতার শেফালি । মিস শেফালি । আরতি দাস।
দেশ ভাগের সময় পূর্ব-পাকিস্তান থেকে আরও অজস্র ভাগ্য বিতাড়িত শিকড় উপড়ানো বাঙ্গালি পরিবারের মতো মহানগরীতে পা রেখেছিল আরতি দাসের পরিবারও। খিদের জ্বালা, অভাব, দারিদ্র থেকে ঘুরে দাঁড়াবার লড়াই। কিন্তু লড়াই একেবারেই প্রথা ভাঙ্গা লড়াই। দেওয়ালে পিঠ থেকে গেলে যেভাবে মোচড় দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হয় তিনি সেভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। আরতি দাস থেকে হয়ে উঠেছিলেন শহর কলকাতার প্রিন্সেস মিস শেফালি ।
পাঁচতারা হোটেলের ফ্লোর থেকে রঙ্গমঞ্চ। সেখান থেকে রূপালী পর্দার জার্নি। মাঝখানে অজস্র রক্তাক্ত দিন আর রাতের গল্প। নিষ্ঠুর ইতিহাস। ভাঙ্গা দেশ, ঘরহারা মানুষের গুমরে ওঠা কান্নার ইতিবৃত্ত ঝিকিয়ে ওঠা নেশা রাতের ঝাড়বাতি আলোতেও জেন মুখ উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকে। মরালগ্রীবায় ফ্লোরে ঝড় তোলেন শেফালি । ডিজাইনার বিকিনির ক্যাবারে গার্ল তছনছ ধরান হৃদয়ে। তবুও কোথায় যেন ট্রাম্পেটের সুর বেজে ওঠে। কোথায় শেফালি ! এ যে বদলে যাওয়া বঙ্গবালার মুখের আদল।
সেই ইতিহাসকেই এবার ওয়েবে আনতে চলেছেন কঙ্কনা সেন শর্মা। ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলার রাজনৈতিক-সামাজিক চেহারার ছবি এবং ক্যাবারে সম্রাজ্ঞী মিস শেফালির জীবন নিয়ে সিরিজ করবেন কঙ্কনা।ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই প্রথম পরিচালনার কাজ করবেন অভিনেত্রী।
নিজের শর্তে চলার স্বাধীনতা। নিজের জীবনের রাশ নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখে বুক পেতে ঝড় সামলানোর সাহস আর আরতি দাসের সেই জার্নি মুগ্ধ করেছে কঙ্কনাকে। সেখান থেকেই এই সিরিজের ভাবনা জন্মায়।
দেশভাগ পরবর্তী সময় এবং উদারনীতিকরনের আগের পরিস্থিতি উঠে আসবে সিরিজে। জি স্টুডিয়োস প্রযোজনা করছে। কাস্টিং এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আগামী বছর শুরু হবে শুটিং এর কাজ।
‘অ্যা ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ নামে একটি হিন্দি ছবি পরিচালনা করেছিলেন তিনি। ছবিটি ‘সেরা চলচিত্রে’র সম্মানও পেয়েছিল।