ডিজনি ওয়ার্ল্ড দেখে বেড়ে ওঠা আমাদের শৈশবের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে রূপকথার রাজ্য। বিশেষকরে সিন্ডেরেলার আইকনিক ক্যাসেল যেন চোখ বুজলেই স্বপ্নরাজ্যে পৌঁছে দেয়। ক্যাসেলের মুখ্য প্রবেশ পথে অতিকায় টুইন টাওয়ার আর সামনে প্রতিচ্ছবি দেওয়া জলরাশি। ঠিক এমনি এক প্রাসাদের স্মৃতিচিহ্ন আছে আমাদেরই কলকাতার খুব কাছে। তাকে বলাই যেতে পারে বাংলার নিজস্ব সিন্ডারেলার ক্যাসেল। কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে বারাসাত যাওয়ার পথে, বেড়াচম্পা ক্রসিং থেকে সাত কিলোমিটার পেরিয়ে, গ্রাম ধান্যকুড়িয়া। ধান্যকুড়িয়া 'প্রাসাদ ঘেরা গ্রাম' নামেও পরিচিত। দুর্লভ স্থাপত্যের অদ্ভুত সব কারুকার্য নিয়ে এই গ্রামেই অপেক্ষা করছে রূপকথার মত প্রাসাদ।
ধান্যকুড়িয়ায় প্রবেশ পথে ক্ষয়ে যাওয়া স্থাপত্য স্বাগত জানাবে সৌন্দর্যপিপাসুদের। প্রাসাদে ঢোকবার পথে জোড়া স্তম্ভের ওপর ধনুকাকৃতির ছাদে ঢাকা পথের ওপর রয়েছে ক্লাসিক ভিক্টোরিয়ান প্রতীক। সময়ের স্রোতে তার কারুকার্য খানিক ম্লান হলেও মলিন হয়নি তার সৌন্দর্য্য। সম্প্রতি রিনোভেট করা হয়েছে স্তম্ভ জোড়া। ব্রিটিশ স্থাপত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেওয়াল চিত্র এবং কারুকার্যগুলি। ধান্যকুড়িয়ার প্রাসাদগুলোর মূল আকর্ষণ রাজকীয় ইতালিয়ান গ্লাস, ভিক্টোরিয়ান সূক্ষ্ম মুখের ক্ষুদ্র স্তম্ভ শ্রেণী আর সিন্ডেরেলা স্টাইল মুখ্য দ্বার-এর 'গায়েন বাগান বাড়ি'। সামনে রয়েছে একটি ছোট সরোবর যেখানে কেল্লার ছায়া দেখা যায় এবং একটি বনভূমি যেটি ছড়িয়ে আছে বন্ধ হয়ে যাওয়া গেট পর্যন্ত, যার আশেপাশে বেড়ে উঠেছে অপর্যাপ্ত গাছ গাছালি, আর এসব ক্যাসেলটিকে করে তুলেছে মনোমুগ্ধকর।
ইংরেজ স্থাপত্যের মত দেখতে হলেও গায়েন বাগান বাড়িটি ১৯ শতকের অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশ, গায়েন জমিদার পরিবারের নিৰ্মাণ। বাগান বাড়িটি অবিকল রূপকথার প্রাসাদের মতোই সাজানো। যেন এমন রূপকথার ক্যাসেলে জমিদারি করে গেছেন গায়েন জমিদার পরিবার। ব্রিটিশ রাজত্বকালে ধান্যকুড়িয়ায় বেশ কিছু সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারের বাস গড়ে উঠেছিল। সম্ভ্রান্ত এই সকল জমিদারেরা এমন স্থাপত্যের মাঝে ছাপ রেখে যেতেন তাদের বিপুল ধনরাশির, কখনো প্রাসাদ তৈরী করে, বাড়ি বানিয়ে বা শুধু ধর্মীয় কোন স্থাপত্যকলার মাঝে। ধান্যকুড়িয়ার এমন কিছু বিখ্যাত স্থাপত্যগুলি হচ্ছে রাস মঞ্চ, মন্ডল বাড়ি, ইংরেজি 'এল' আকৃতির সাহু বাড়ি এবং গ্রামের অন্যান্য নজর কেড়ে নেওয়া শিল্পগুলি।
কলকাতা থেকে কয়েকঘন্টা দূরের এই গন্তব্যস্থল ভ্রমণপ্রিয় হৃদয়কে পৌঁছে দেবে বাংলার নিজস্ব স্বপ্ন রাজ্যে। সপ্তাহ শেষে পছন্দের আগাম গন্তব্যের তালিকায় এবারে বেছে নিতেই পারেন 'ভিলেজ অফ প্যালেস' ধান্যকুড়িয়াকে।