অথেন্টিক চাইনিজ খাবার মানেই 'ইয়াউ চিউ'

সেন্ট্রাল এভিনিউ। সেন্ট্রাল এভিনিউ থেকে গণেশ চন্দ্র এভিনিউ ক্রসিং। ক্রসিং বরাবর বি.বি.ডি. বাগের দিকে ৩-৪ মিনিট হাঁটা পথ। তার পরেই একটা পুরানো কার পার্কিং এরিয়া। ঠিক তার পাশেই একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া পেট্রোল পাম্প। এর পিছনেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন ইমারত। সেখানেই একটি বোর্ডে লেখা ইয়াউ চিউ রেস্টুরেন্ট (EAU CHEW RESTAURANT)। নাম শুনেই বোঝা যায় এটি একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁ। কলকাতার বুকে চাঁদনি চক সংলগ্ন এলাকায় সম্পূর্ণ চাইনিজ খাবারের প্রাচীন রেস্তোরাঁ হিসাবে পরিচিত এই ইয়াউ চিউ রেস্টুরেন্ট (Eau Chew Restaurant)।

                      শুধুমাত্র কলকাতা নয়,  ভারতের সর্ব প্রাচীন চাইনিজ রেস্তোরাঁ হিসাবে পরিচিত ইয়াউ চিউ রেস্টুরেন্ট। ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে এই রেস্টুরেন্ট চলে আসছে। তবে ঠিক কবে এই রেস্তোরাঁটি স্থাপিত হয়েছিল সে বিষয়ে একটু মতবিরোধ দেখা যায়। কেউ মনে করেন এই রেস্তোরাঁর সূচনা হয় ১৯২৭ সালে, আবার কারোর মতে এটি তৈরী হয়েছিল ১৯২২ সালে। ভারতীয় চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ইয়াও চিউ রেস্টুরেন্ট-কে সর্ব প্রাচীন চাইনিজ রেস্তোরাঁ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। প্রকৃত চাইনিজ খাবারের স্বাদ পেতে আসতে হবে এই রেস্তোরাঁয়।

                     নামী-দামী রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে রাস্তার ফুটপাথের দোকান কলকাতার সর্বত্রই চাইনিজ খাবারের সম্ভার। শহর জুড়ে চাইনিজ খাবারের চাহিদাও তুঙ্গে। তবে এখানে দোকান গুলিতে যে ধরণের চাইনিজ খাবার পাওয়া যায় তা প্রকৃত চাইনিজ খাবার থেকে অনেকটাই ভিন্ন। আবার দেখতে গেলে যারা এই চাইনিজ খাবার বিক্রি করে থাকে তারা কেউ আদতে চিনা বংশোদ্ভূত নয়। তাই স্থান ভেদে খাবারের স্বাদ ভিন্ন হয়ে থাকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে টেরিটিবাজার কলকাতার চায়নাটাউন হিসাবে পরিচিত। চীন থেকে বহু মানুষ এখানে এসে বসবাস শুরু করেছিল। চীনাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়াও পাওয়া যেত রকমারি চাইনিজ ফুড। এই সকল দোকানের খাবার গুলির মধ্যে পাওয়া যেত অথেন্টিক চাইনিজ স্বাদ। প্রথমের দিকে শুধুমাত্র চীনা বাসিন্দারাই এই সকল খাবার খেতেন পরে বাঙালিদের কাছেও চাইনিজ খাবার পছন্দের হয়ে ওঠে।

               হুয়াং ফ্যামিলি’ নামক এক চীনা পরিবার কলকাতায় এসেছিলেন ভারত স্বাধীন হওয়ার বহু বছর আগে। তাদের প্রাচীন রেস্টুরেন্ট ইয়াউ চিউ’ বর্তমান কলকাতা শহরে এখনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই রেস্তোরাঁয় যেহেতু প্রথম থেকেই হুয়াং পরিবারের সদস্যরাই রান্নার কাজ করে আসছেন তাই খাবার গুলি সম্পূর্ণ চাইনিজ স্বাদের যা কলকাতার অন্যান্য চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গুলি থেকে বহু গুনে ভিন্ন। বর্তমানে হুয়াং পরিবারের চতুর্থ জেনারেশন মিঃ জোয়েল হুয়াং এবং মিস ডোরেন হুয়াং ইয়াউ চিউ রেস্তোরাঁর মালিক।

       

ইয়াউ চিউ রেস্তোরাঁর আকর্ষণ হল জোসেফ নুডুলস’ ও ‘চিমনি সুপ’ হুয়াং পরিবারের এক সদস্য জোসেফ হুয়াং এই বিশেষ নুডুলসটি তৈরী করেছিলেন বলে তাঁর নামের অনুকরণে এই খাবারটির নাম রাখা হয় জোসেফ নুডুলস। এই নুডুলসটি তৈরী হয় বিভিন্ন সবজি, ডিম, মাছ,  মাংস ও হুয়াং পরিবারের সিক্রেট মশলা দিয়ে। আর চিমনি সুপের বিশেষত্ব হল সুপটি শুরুর দিকে সম্পূর্ণ ভাবে তৈরী না করেই পিতল ও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে সার্ভ করা হত। ঐ পাত্রের মাঝের একটি ছোট্ট চিমনিতে রাখা থাকত কাঠকয়লা। রেস্তোরাঁয় আসা জনগনের বার্তালাপের মধ্যেই চিমনির কাঠকয়লার তাপে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠত সেই সুস্বাদু সুপ। তবে বর্তমানে চিমনি সুপ সম্পূর্ণ তৈরী করেই সার্ভ করা হয়, এবং চিমনি ও কাঠকয়লা শুধুমাত্র সুপটি গরম রাখার জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই চিমনি সুপ তৈরী হয় ডিম, চিংড়ি,  চিকেন, পর্ক ও বিশেষ মাছ ও সবজি দিয়ে। শোনা যায় দেশ ছাড়ার সময় হুয়াং পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য এই সকল রান্নার বাসন নিয়ে এসেছিলেন। এছাড়াও এই রেস্তোরাঁর বিশেষত্ব হল রোস্টেড চিলি পর্ক উইথ স্মোকি ফ্লেবার’, ‘ফিস উইথ চিলি ব্ল্যাক বিন’, ‘সাকিং পর্ক’, ‘সিজুয়ান প্রন’ ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে জিভে জল আনা আরো অনেক চাইনিজ খাবার। আপনি যদি অথেন্টিক চাইনিজ ফুডের স্বাদ নিতে চান তাহলে আসতেই হবে চাঁদনি চক সংলগ্ন ইয়াউ চিউ চাইনিজ রেস্টুরেন্টে।     

 

    

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...