স্বাধীনতার সময় থেকেই ফাঁসি - শব্দটির সাথে ভারতবাসীর পরিচিতি। দেশের জন্য আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবে তার সাথে খানিক ভিন্ন অনুভূতিও জড়িত। তবে সেই সব মঞ্চ ছিল জেলের ভিতরেই। কিন্তু শুরুর দিকে বিষয়টা এমন ছিল না। প্রকাশ্য দিবালোকে দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যেই 'অপরাধীদের' ফাঁসি হতো। আর সেই স্মৃতি এখনো বয়ে চলেছে খোদ কলকাতার একটি পরিচিত গলি - ফ্যান্সি লেন। আজ লুকোনো সেই সত্যি জানবো। ইংরেজি ব্যাখ্যায় ফ্যান্সি শব্দের মানে যাই হোক না কেন এই গলির খ্যাতি ছিল -ফাঁসির কারণে। কলকাতার অন্যতম পুরোনো রাস্তা এটি এবং ঘটনাবহুল বটে। কলকাতার ওয়েলেসলি প্লেস থেকে কাউন্সিল হাউস পর্যন্ত বিস্তৃত এই রাস্তা। সেই জব চার্ণকের সময় থেকেই রাস্তার অস্তিত্ব । একটা সময় এর পাশ দিয়ে একটা খাল প্রবাহিত হতো, পশ্চিমে বয়ে গিয়ে মিলিত হয়েছিল গঙ্গার সঙ্গে। এখন অবশ্য তা বিলুপ্ত। এই গলির তৎকালীন চিত্রের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় আর্চডিক্যান হাইডের 'প্যারোকিয়াল অন্যালস এবং 'পেরিশ অফ বেঙ্গল' বই দুইটিতে।
কিন্তু এর প্রকৃত ইতিহাস ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। জব চার্ণক তখন জীবিত। সেই সময় এক ‘দস্যু’ কে গুরুতর অপরাধে ফাঁসির আদেশ দিলেন তিনি। বন্ধ ঘরে নয় , সর্বসমক্ষেই দোষীর শাস্তির ব্যবস্থা হবে - এমনি সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তখনি রাস্তার মোড়ে একটি গাছের কাছে তৈরী করা হয় ফাঁসির মঞ্চ। ফাঁসি হলো দস্যুর। সেই সূচনা। এর পর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির নিদর্শনে রাস্তার মাঝে এইভাবেই ফাঁসি দেওয়া শুরু হয়। কিছু ক্ষেত্রে খানিক লঘু অপরাধে গুরু দণ্ড - অর্থাৎ ফাঁসি দেওয়া হতো। আর সেই রাস্তাই উচ্চারণ দোষে দুষ্ট হয়ে, হয়ে গেছে ফ্যান্সি লেন। নামের এই অদ্ভুত পরিবর্তনের জন্য মূলত ইংরেজদের অবদান এক্ষেত্রে খানিক বেশি। তাদের অপভ্রংশ উচ্চারণে সেই ফাঁসি লেন হয়ে গেলো ফ্যান্সি লেনে। কি নামের কি মানে হলো ! কিন্তু আজ আর তার কোনো চিহ্নই পাওয়া যাবে না , না মঞ্চ না ঝুলন্ত দেহ। এখন অবশ্য গলিটিতেই রয়েছে রাজভবনের স্টাফ কোয়ার্টার্স। আর রয়েছে কিছু অফিস ও দু’একটি দোকান এবং ব্রিটিশ আমলের চিহ্ন নিয়ে ভেঙে-পড়া পুরোনো বাড়ি। তবে নামটি স্মৃতিকে রগরগে করে তোলার জন্য যথেষ্ট।