প্রয়াত বাংলার প্রবীণতম-প্রথাবিরোধী চিত্রশিল্পী রবীন মণ্ডল

২০১৮-তে বয়সের নিরিখে ৯০ এ পদার্পণ করেছিলেন তিনি। শরীরে ন্যুব্জে পড়ছিলেন কিন্তু আমৃত্যু মাথা নুঁয়ে কাজ করে যেতে হবে, এই বিশ্বাসের প্রতিই জীবন সমর্পণ করে চলে গেলেন প্রথা বিরোধী শিল্পের কারিগর চিত্রশিল্পী রবীন মণ্ডল। মঙ্গলবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই প্রবীণতম বাঙালি চিত্রকর।

১৯২৯ সালে হাওড়ার এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম এই শিল্পীর। পড়েছেন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে। ১৯৬৮ সালে সাত-আট জন বন্ধু মিলে দিল্লির আইফ্যাক্স গ্যালারিতে ছবির প্রদর্শনী করেন, পরে উৎসাহিত হয়ে তৈরী করেন ‘ক্যালকাটা পেন্টার্স’। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত ললিত কলা আকাডেমির সদস্য ছিলেন। পুরস্কৃত হয়েছেন অবনীন্দ্রনাথ পুরস্কারে।  সুন্দর নয়, ‘খ্যাঁচামার্কা’ ছবি আঁকতেই ভালবাসতেন। রেম্ব্রান্ট-কে আদর্শ ভাবতেন, বন্ধু ভাবতেন আর ভালোবাসতেন পিকাসো, মাতিস, রামকিঙ্কর, গনেশ হালুই-এর কাজ। শুধু ভারত নয়, নানা দেশেই তাঁর ছবি-ভাবনা পৌঁছেছিল।

২০১৮, ৩০ জুন প্রকাশিত এক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি নিয়ে বলা খুব শক্ত। কে কী ফিলিংস নিয়ে করছে জানি না। ওরা বলেন এর মধ্যে দুঃখ আছে, হাসি-কান্না সবই আছে। একটা লোক ছবি দেখে একটা ইমপ্রেশন নিয়ে যায়। সে যোগ-বিয়োগ করে বলবে এটা দুঃখের ব্যাপার, কি আনন্দের ব্যাপার অত কিছুর দরকার নেই। ছবি দেখে যদি সে পেয়ে যায় তাহলে ঠিক আছে। তা নাহলে তারা বলে এ রঙ নিয়ে খেলা করেছে ভালো। যেমন জ্যাকসন পোলক। জ্যাকসন পোলকের যন্ত্রণাটা আমরা যারা ছবি আঁকি তারা বুঝতে পারি কত যন্ত্রণার মধ্যে সে ছবিগুলো করেছে। অন্যের কাছে ওগুলো অ্যাবস্ট্রাকট পেন্টিং, কি করছে কিছুই বুঝতে পারছি না।“

ভবিষৎ নয়, ‘আর্ট’-এর ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই সাম্প্রতিক, এমনটাই ভাবতেন। প্রতি কালেই এটা হয়ে এসেছে যে, যাঁরা আর্ট বোঝেন তাঁরা সেটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, যাঁরা বোঝেন না তাঁরা দেন নি, এই অঘোর সত্যিও তিনি স্বীকার করেছেন। চাইতেন বিশাল বিশাল ছবি তৈরী করতে। দেশের শিল্প সংক্রান্ত অর্থনৈতিক তথা মানসিক মন্দা তাঁর মত সত্যিকারের শিল্পীসত্ত্বাকেও ব্যথিত করেছিল।

তাঁর কাজের যে সময়কাল, সেখানে যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের যে চরম মানবিক বিপর্যয় তিনি তা চাক্ষুষ করেছিলেন ব্যক্তিজীবনে-শিল্পজীবনে; তার ছবিকে সেই চিন্তনই প্রভাবিত করেছিল। এক দশকেরও বেশি সময় বাড়িতে থাকতেন একা-একা। সঙ্গী বলতে ছবি, বই আর চন্দন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমৃত্যু তাঁর সহায়ক ছিলেন চন্দনই। শিল্পীর সংস্পর্শে থেকে তাঁর পরিচর্যা করতে গিয়ে ধীরে ধীরে তার ভিতরেও গজিয়ে উঠেছিল উদ্ভাবনী চারা। সেই চন্দনের ছত্রছায়া-ভালোবাসাতেই চলে গেলেন রবীন। যেমনটা শিল্প এবং শিল্পীর ক্ষেত্রে হয়ে চলে।  

 

 

(তথ্য সহায়তাঃ পরবাস)

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...