কলকাতা শহরে তৈরি হয়েছে পরিবেশবান্ধব ক্যাফে! চটপট জেনে নিন ঠিকানা

পরিবেশের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, এই ব্যপারে বর্তমানে সবাই খুব সচেতন। ফলে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে হাঁটা দিয়েছে সকলে। এটা একেবারে স্পষ্ট!

পরিবেশের ক্ষতি মানেই যে আমাদের ক্ষতি। আর এই ক্ষতির জেরেই উষ্ণায়ন, বৃষ্টি, আচমকা ভূমিকম্প, সুনামি— সবকিছুই পরিবেশ দূষণের ফল। আর মানুষ বেঁচে থাকতে চাইলে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতেই হবে।

এই কর্মে শুধু বিদেশ নয়, আমাদের ভারতও নানারকম প্রচেষ্টা চালিয়ে এগিয়ে চলেছে। ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে পরিবেশবান্ধব দেশ! যেমন এখন রাস্তায় পেট্রল কিংবা ডিজেলের পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত গাড়ি চলছে। এছাড়া তাপবিদ্যুতের জায়গায় বাড়িতে বাড়িতে সৌরচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে মানুষ।

ঠিক তেমনই কলকাতা শহরও পরিবেশকে দূষণমুক্ত করাএ জন্য নানান রকম বিষয়ে মাথায় রেখে নানা রকমের কাজ শুরু করেছে। পোশাকশিল্প থেকে শুরু করে অন্দরসজ্জা, সব জায়গাতেই পরিবেশবান্ধব ভাবনার ছোঁয়া দিচ্ছে মানুষজন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল রন্ধনশিল্প।  

Serra Café

হ্যাঁ। এমনই এক জায়গা পাওয়া গিয়েছে শহরে।

কলকাতায় প্রকৃতির মাঝে প্রিয়জন কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় কাটাতে চান? তাহলে এই ঠিকানাটা একেবারে তৈরি হয়েছে আপনার জন্য। চলে আসুন সল্টলেক সেক্টর ফাইভের ‘সেরা ক্যাফে’-তে।

এরকম গ্রিন হাউস ক্যাফে বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। আর ফলে, এরকম অভিনব ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই শহরের বুকে পরিবেশবান্ধব ক্যাফে বানিয়েছেন এক বিলেতফেরত ভদ্রমহিলা। নাম কমলিনী পাল।

একটা ছোট্ট জায়গা। সেখানে ইট-সিমেন্টের প্রাচীর নয়, আছে শুধু স্বচ্ছ কাচের দেওয়াল আর তার বাইরে সবুজ গাছে ভরা। সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে গেলেই মিলবে দু’জনের একান্তে সময় কাটানোর সুন্দর জায়গা। সবুজ ও প্রিয়জনের সাথে সময় কাটাতে একবার ঢুঁ মেরেই আসতে পারেন এই গ্রিন হাউস ক্যাফেতে। তবে, চিন্তা করবেন না, এই ক্যাফেতে গরম লাগার কোনও ব্যপার নেই। পুরোটাই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত।

তবে, শুধু পরিবেশ নয়। এই ক্যাফের খাবারের পরিবেশের কথা মাথায় রাখা হয়েছে। এই ক্যাফের মেনুতে বাজার থেকে কেনা প্রক্রিয়াজাত বেকন, সালামি, সসেজ নয়, পাওয়া যায় স্থানীয় বাজার থেকে কেনা টাটকা শাক, সব্জি, ফল, মাছ দিয়ে বানানো হরেক রকম পদ।

ক্যাফে মানেই সেখানে কফি, পিৎজা, বার্গার, এই ধরণের খাবার খাওয়াই হয়। তবে, চট করে মেনুতে মৌরলা মাছ পড়বে না।    

জানা গিয়েছে যে এই ক্যাফের পয়লা বৈশাখের বিশেষ মেনুতে রয়েছে মৌরলা মাছ ভাজা। এছাড়া সঙ্গে রয়েছে কাঁচা আমের স্যালাড।

মরসুম অনুযায়ী ‘সেরা ক্যাফের’ মেনুতেও বদল আসে। একদমই তাই। চলতি বছরের বৈশাখী মেনুতে শরীর সতেজ রাখার জন্য কাঁচা আম, গন্ধরাজ লেবু, বেল, দই দিয়ে তৈরি নানা রকম পদ রাখা হয়ে‌ছে।

এই বিষয়ে কর্মকর্ত্রী কমলিনী জানিয়েছেন যে আর পাঁচটা দিন খাবার নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও নববর্ষে কিন্তু বাঙালির ভোজে বাঙালি খাবার চাই-ই-চাই। ক্যাফে খোলার পর এ বছর প্রথম নববর্ষ উদযাপন হবে। তাই তাঁরা ১২ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল ক্যাফেতে বিশেষ বুফে মেনুর ব্যবস্থা করেছেন। সেই মেনুতে রকমারি বাঙালি পদ তো থাকবেই, তবে তাতে থাকবে ‘ফিউশন টাচ্’। মেনুতে থাকবে বেল মোহিতো, কাঁচা আমের ঘোলের সঙ্গে রকমারি স্যালাড, নাচোজ ঘুগনি চাট, সেজুয়ান ফুচকা। প্রথম পাতে বেগুনি নয়, থাকছে এগপ্ল্যান্ট ওরলির সঙ্গে ফ্রায়েড মোচা র‌্যাভিওলি, এঁচোড়ের কাটলেট, মাংসের পাটিসাপ্টা, চিংড়ি মাছের শিক কবাব। মেনুতে পাবেন ছানার রেজ়ালা, বেক্‌ড সর্ষে পমফ্রেট,  ঢাকাই পোড়া মাংস, নলেন গুড় চিজ কেক প্ল্যাটারের মতো ফিউশন সব পদ। খাবারে বাঙালিয়ানা থাকলেও প্রত্যেকটি পদে নতুন স্বাদ পাবেন সকলে। এই গরমের সময়ে রান্নায় এমন মশলা ব্যবহার করছি যা খেয়ে শরীর খারাপ হবে না। এছাড়া বিদেশি মশলাপাতি নয়, তাঁর ক্যাফেতে সব রান্নাই হয় দেশি মশলা দিয়ে।

এখানেই শেষ নয়। এই ক্যাফেতে নববর্ষের বিশেষ মেনুটি গ্রাহকদের পরিবেশন করা হবে মাটির থালা-বাসন আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি কুলোর উপরে। কমলিনী আরও জানিয়েছেন যে তাঁদের ক্যাফেটিকে সব দিক থেকে পরিবেশবান্ধব করে তোলার চেষ্টা করছেন। ক্যাফেতে সারা দিনে যা বর্জ্যপদার্থ জমা করা হয়, তা তাঁরা পাঠিয়ে দিই রিসাইক্লিংয়ের জন্য। শাকসব্জির খোসা থেকে প্লাস্টিক, সব ধরনের বর্জ্যই পাঠানো হয় রিসাইক্লিং করতে।

তাহলে আর বেশি না ভেবে ঘুরেই আসুন এই গ্রিনহাউস ‘সেরা ক্যাফে’তে। হয়েতো একবার গেলেই মন চাইবে বারবার যাই।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...