পরিবেশের যেভাবে ক্ষতি হচ্ছে, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই সেদিকে নজর দিয়ে রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে, যাতে কিছুটা হলেও পরিবেশ দূষণ রোধ করা যায়। এই লক্ষ্যে কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করতে এবং বিদ্যুতের খরচ বাঁচাতে রাজ্যের ১২৫টি পুরসভার সব স্ট্রিট লাইটকে স্মার্ট করে তোলার সিদ্ধান্ত নিল পুর দফতর।
এই নতুন পাল্টে ফেলা লাইটকে 'স্মার্ট লাইট' বলা হচ্ছে। শুধু কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করাই নয়, পরিবেশ বান্ধব এই স্মার্ট লাইটের ব্যবহারে বছরে বিদ্যুৎ খরচ বাবদ খরচ ৩০শতাংশ কমে আসবে বলে জানা গিয়েছে পুর দফতর সূত্রে। গোটা ব্যবস্থাটাই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে পুর দফতর। এই লাইটের বৈশিষ্ট্য হল, সন্ধেবেলায় যানবাহন ও পথচারীদের ভিড়ের ব্যস্ত সময়ে আলোর তেজ থাকবে ১০০ শতাংশ। রাস্তাঘাটে ভিড় কমে গেলেই আলোর তেজ কমে যাবে এবং ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ওই স্মার্ট লাইট নিভে যাবে। গ্রিন সিটি মিশনের আওতায় মিউনিসিপ্যাল এনার্জি এফিসিয়েন্সি প্রোগ্রাম অনুযায়ী(এমইইপি) স্মার্ট লাইট বসানোর কাজ শুরু করেছে পুর দফতর। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় শক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা এনার্জি এফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেডের(ইইএসএল) সঙ্গে রাজ্য সরকার চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
খুব তাড়াতাড়ি গোটা রাজ্য জুড়েই স্মার্ট লাইট লাগানোর কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি আরও বলেন, এনার্জি এফিসিয়েন্সি প্রোগ্রাম-এর আওতায় রাজ্যের ৩৯টি পুর শহরে ১১৬১টি জলের পাম্প পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি স্মার্ট লাইট চালু হলে সর্ব সাকুল্যে বেশ খানিকটা বিদ্যুতেরও সাশ্রয় করা যাবে। ইতিমধ্যেই হাইপ্রেশার সোডিয়াম ভেপার এবং মেটাল হ্যালাইড ফিটিংসকে এলইডি-তে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তাই সেক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিদ্যুতের সাশ্রয় করা গেছে। আবার এই স্মার্ট লাইট লাগানো হলে আরও বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও পুরদফতর সূত্রে জানা গেছে, একটি সেন্ট্রাল সার্ভারের মাধ্যমে স্মার্ট লাইট জ্বালানো হবে। ওই সার্ভার থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান বা মেয়র জানতে পারবেন কোন পাড়ায় স্ট্রিট লাইট খারাপ রয়েছে। তাছাড়া এই লাইটের আর একটি বিশেষত্ব হল, এটি জ্বালানোর জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবেনা। তাই এই লাইট চুরি যাওয়ার কোনো ভয় নেই।
আমরা শহরবাসীরা উন্মুখ হয়ে থাকব এই নতুন প্রযুক্তিতে তৈরী লাইটের স্মার্ট আলোর জন্য। কলকাতার রাস্তায় স্মার্ট লাইট পরিবেশের সহায়ক হবে এবং অবশ্যই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে। তার পাশাপাশি চাইব আমরা নিজেরাও যেন আর একটু সচেতনভাবে পরিবেশের যত্ন নিতে পারি এবং যে উদ্যোগ সরকারি তরফে করা হচ্ছে, তার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারি।