কলকাতা বন্দর দেড়শো বছরে পা রাখতে চলেছে। এই উপলক্ষে সারা বছর জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করতে চলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৭ অক্টোবর কলকাতা বন্দরের জন্মদিন। কলকাতা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পোর্ট কমিশনার আইন তৈরী করে ১৮৭০ সালের ১৭ অক্টোবর কলকাতা বন্দরের যাত্রা শুরু হয়। যদিও তার আগে থেকেই কলকাতা বন্দরে জাহাজ চলাচল করত, কিন্তু তখন কোনও নির্দিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ ছিলনা।
একটু পেছন ফিরে দেখতে গেলে দেখা যাবে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ভারতের প্রধান বন্দর ছিল এই কলকাতা বন্দর। বর্তমান ভারতের চালু বন্দরগুলির মধ্যে এটিই প্রাচীনতম। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সাময়িকভাবে বন্দরটির অবনতি ঘটলেও বিংশ শতাব্দীর সূচনায় পূর্ব ভারতের অথনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও পরিকাঠামোগত উন্নতির ফলে বর্তমানে কলকাতা বন্দর দেশের বৃহত্তম মালবাহী বন্দরে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক নৌ বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার আগে এটি ছিল তাঁতি ও কারিগর অধ্যুষিত ছোট্ট একটি নদী বন্দর। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, বন্দর শহর হিসেবে কলকাতার উত্থানের পেছনে নৌ গুরুত্ব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম দিকে মাস্টার অ্যাটেন্ডেন্ট কর্তৃক পরিচালিত কোম্পানির নৌ দফতরের অধীনে বন্দর প্রশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্রগামী জাহাজগুলিতে পাইলট সার্ভিস প্রদান করা। নদীর নাব্যতা সম্পর্কে প্ৰতিবেদন দেওয়ার জন্য মাস্টার অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়মিতভাবে নদী জরিপের কাজও পরিচালনা করত। পরবর্তীতে কলকাতা বণিক সম্প্রদায়ের ক্রমাগত দাবির ফলস্বরূপ ১৮৯২ সালে খিদিরপুর ডক নির্মাণ ছিল ঊনিশ শতকের শেষ ভাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ দুটি পৃথক ডক সমষ্টির দায়িত্বে নিযুক্ত রয়েছে। কলকাতা ডক ব্যবস্থা এবং হলদিয়া ডক চত্বর। এর মধ্যে রয়েছে মূলতঃ খিদিরপুর ডক, নেতাজি সুভাষ ডক, বজবজ নদী মুরিং, ডায়মন্ডহারবার নোঙরখানা, ইমপাউটেড ডক, তিনটি তেলের জেটি, তিনটি বজরা জেটি এবং হলদিয়া নোঙরখানা। এই বন্দরে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল বা প্রবেশপথ রয়েছে। হুগলি নদীর মোহনা থেকে শুরু হয়ে এটি কলকাতা ডক পর্যন্ত বিস্তৃত।
দেড়শ বছর উপলক্ষে আগামী এক বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে হাওড়া ব্রিজকে নানা রঙের এলইডি আলোয় সাজানো হবে। আলোর সঙ্গে শব্দও যুক্ত হবে এই ব্যবস্থায়। এছাড়া একটি পুরোনো স্টিমারকে সংস্কার করে গঙ্গায় হেরিটেজ ভ্রমণের আকর্ষণ হিসেবে রাখতে চলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চলতি শীতেই এটি চালু হওয়ার কথা।