তিলোত্তমা কলকাতায় প্রবীণেরা কি খুব একা? মাঝে মাঝে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যখন প্রবীণদের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যায় তখন সেটাই মনে হয়। তবে কলকাতা পুলিশের তরফে "প্রণাম" নামের একটা হেল্পলাইন করা হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। সেখানে নাম নথিভুক্ত করলে কলকাতার প্রবীণরা নানান সহায়তা পেতে পারেন। কাটতে পারে তাঁদের একাকীত্ত্ব। আইনি, চিকিৎসা, পথে বার হয়ে কোনো বিপদে পড়লে তার জন্য সহায়তা, বিনোদন সব ক্ষেত্রেই সহায়তা দেয় 'প্রণাম"। শুধু একটা ফোন করে বা অনলাইন এ নিজের নামটা রেজিস্ট্রি করলেই হবে। তবেই পুলিশ বন্ধু আপনার সহায়তায় বন্ধুর মতো হাত বাড়াবে। "প্রণাম" এর দায়িত্বে আছেন কলকাতা পুলিশ এর জয়েন্ট কমিশনার (এস্টাব্লিশমেন্ট) সুজয় কুমার চন্দ।
কলকাতা পুলিশ এর তরফে জানানো হয়েছে, যাঁদের বয়েস ৬৫-র বেশি, যাঁরা কলকাতায় নিজেদের বা ভাড়া বাড়িতে একা থাকেন, তাঁরা এই সুবিধা পাবেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের কলকাতা কর্পোরেশন এলাকায় বসবাস করতে হবে, তবেই তাঁরা এই সহায়তা পাবেন। আগে সংশ্লিষ্ট থানাতে নাম নথিভুক্ত করাতে হতো। এখন অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন থানাতে একেকজন আধিকারিক নিযুক্ত আছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রবীণদের দেখভালের জন্য। এই আধিকারিকের অধীনে ৩ জনের একটি দল আছে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট বাড়ি গেয়ে খোঁজ নিয়ে আসেন বাড়িতে প্রবীণ পুরুষ ও মহিলা একা আছেন কি না, তাঁদের সঙ্গে তাঁদের পুত্র, কন্যা বা কোনো আত্মীয় থাকেন কি না। যদি দেখা যায় প্রবীণ পুরুষ ও মহিলার সঙ্গে তাঁদের পুত্র, কন্যা বা কোনো আত্মীয় থাকেন, তবে তাঁরা "প্রণাম" এর সহায়তা পাবেন না। বর্তমানে 'প্রণাম" এর সদস্য সংখ্যা ১৫ হাজারের কিছু বেশি। অনলাইন এ নাম নথিভুক্ত করার ব্যাবস্থা চালুর পর প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে "প্রণাম" এর সদস্য হচ্ছেন। এ ছাড়াও ২৪ ঘন্টার একটা হেল্প লাইন আছে, যার নম্বর ২৪১৯-০৭৪০/৪১/৪২।
কলকাতা পুলিশ এর তরফে জানা গেছে, কোনো বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়লে "প্রণাম" খবর পাওয়া মাত্র তৎক্ষণাৎ তাঁকে বাড়ি থেকে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল এ ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দেয়। এই ক্ষেত্রে হসপিটাল এ ভর্তির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। রাস্তায় বার হলে কি রকমের সতর্কতা প্রবীণদের নেওয়া উচিত, তাও "প্রণাম" থেকে জানানো হয়। অনেক সময় কোনও কোনও অঞ্চলের প্রবীণেরা দুষ্কৃতীদের নজরে পড়ে যান। দেখা যায় সাহায্য করার নাম করে দুষ্কৃতীরা তাঁদের প্রাণে পর্যন্ত মেরে ফেলতে দ্বিধা করে না। এই বিষয়টাও স্থানীয় থানা নজরদারি করে। এ ছাড়া পুজোর সময় ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাওয়া, কোনো গান বা নাটকের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া, পিকনিকে নিয়ে যাওয়া, রাখি, ভাইফোঁটার মতো অনুষ্ঠানেও যাতে প্রবীণেরা অংশগ্রহণ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয় "প্রণাম" এর পক্ষ থেকে। এক কথায় বলা যায় "প্রণাম" হচ্ছে কলকাতার প্রবীণদের প্রকৃত বন্ধু, সখা। তাই পুত্র কন্যা কাছে না থাকলেও হতাশ হবেন না, আপনার পাশে 'প্রণাম" সদা সর্বদা আছেই|