আজ থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এ বছর উৎসবের রজত জয়ন্তী বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যেবেলা নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে হবে অনুষ্ঠানের বর্ণময় উদ্বোধন। তাই বলাই বাহুল্য কলকাতা এখন মেতেছে সিনেমা উৎসবে। সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবে রয়েছে সকলের আমন্ত্রণ তথা ছবি দেখার সুযোগ। নন্দন চত্বর সেজে উঠেছে নতুনভাবে। আন্তর্জাতিক মানের তৈরী করা হয়েছে নন্দনের লাউঞ্জ।
নন্দন চত্বরে গতকাল ছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ছিল সিনেমাপ্রেমীদের ছবি দেখার জন্য কার্ড নেবার হুড়োহুড়ি। ছিল পথ চলতি মানুষের যাতায়াতের পথে একবার চত্বরে ঢুঁ মেরে যাওয়া। ছিল সেলফি তোলার হিড়িক। পুরো চত্বর সেজে উঠেছে আলোকমালায়। রাখা হয়েছে সেলফিজোন। নন্দন-এ ঢোকার মুখে রাখা হয়েছে ক্রিয়েটিভ ভাবে তৈরী একটি মডেল ক্যামেরা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আলোয় আলোকময় নন্দন যেন সত্যিই উৎসবকে বরণ করে নেবার জন্য তৈরী।
ডেলিগেট লাইনে দাঁড়ানো বছর ২৬-এর 'সিতেশ বড়ুয়া'র কাছ থেকে জানা গেল, সে এবারেই প্রথম ডেলিগেট কার্ডের জন্য আবেদন করেছিল। উৎসবের রজত জয়ন্তী বর্ষে বিভিন্ন সিনেমা দেখতেও যেমন উৎসাহী সিতেশ, তেমনি এই বর্ষের উৎসবের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চায় আনন্দের স্মৃতি হিসেবে। তাই লম্বা লাইন থাকা সত্বেও সিতেশের কোনও রকম বিরক্তির লেশমাত্র ছিলনা, ছিল যথেষ্ট উৎসাহ। গোটা প্রক্রিয়াটা খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণও করছিল সিতেশ। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর ৫৮-র 'প্রমথেশ বক্সী'। তিনি এই নিয়ে ১৪ তম বছর বা চতুর্দশতম বছরে দেখবেন উৎসবের সিনেমা। তাঁর গলার ঝরে পড়ছিল বিরক্তির প্রকাশ। সিস্টেম নাকি খুব মন্থর। সব কাজ খুব ধীর গতিতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ করলেন তিনি, তবে অনেক জাঁকজমক বেড়েছে একথা স্বীকার করলেন। আগে সকলের জন্য অবারিতদ্বার ছিলনা এই উৎসব, ফলে অনেকের ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিলনা আন্তর্জাতিক মানের ছবি দেখবার। এখন সেটা হওয়ায় যদি কেউ চায়, তাহলে সে তার নিজের জায়গা থেকেই চলচ্চিত্র উৎসবের ছবি দেখতে পারে। সারা কলকাতা জুড়ে বিভিন্ন সিনেমাহলে উৎসব দেখানোর সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করলেন প্রমথেশবাবু। নন্দনে সেলফি তুলতে দেখা গেল বেশ কিছু যুবক-যুবতীকে। ইতি-উতি হাঁটতেও দেখা গেল বেশ কিছু যুবক-যুবতীকে। কলেজ পড়ুয়া 'পৌলমী ঘটক' জানালেন, তাঁর এই চত্বরটা খুব নস্টালজিক মনে হয়। এখানে এলে যেন কিছুক্ষন কলকাতার বাঙালিয়ানার আমেজ পাওয়া যায়। তিনি আরও জানালেন, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী হওয়ায় কলেজে খুব চাপ, তার ওপর থার্ড ইয়ারের পড়াশুনোর সঙ্গে রয়েছে ক্যাম্পাসিং-এ চান্স পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি, তাই সিনেমা দেখতে আসা হবেনা। কিন্তু পৌলমী চেষ্টা করবে কলেজ যাতায়াতের পথে এখানে ঢুঁ মেরে গিয়ে এই জায়গার আমেজটা উপভোগ করার।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এবারের বিশেষ বর্ষ উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে নতুন সিগনেচার ফিল্ম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমনই দু'টি নতুন সিগনেচার ফিল্ম যেখানে হবে। ফেস্টিভ্যালের চেয়ারম্যান পরিচালক রাজ চক্রবর্তী জানান, এর আগেও যদিও সিগনেচার ফিল্ম তৈরী হয়েছে, কিন্তু এবারে যেহেতু উৎসবের ২৫ বছর তাই নতুন করে দু'টি সিগনেচার ফিল্ম তৈরি করা হচ্ছে। এটা ফেস্টিভ্যাল কমিটির সিদ্ধান্ত। প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এই দু'টি ছবি বানিয়েছেন। সিনেমার ১০০ বছরকে সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন ছবির টুকরো টুকরো ফ্রেম এক জায়গায় রেখে প্রেমেন্দু বানিয়েছেন এই সিগনেচার ছবিটি। তিনি এই ছবিটি বানানোর জন্য দু'সপ্তাহ ধরে গবেষণা করেছেন। থাকছে সিনেমা শুরুর সময় থেকে বর্তমান সময়ের ক্লিপিংস। ছবিতে বিক্রম ঘোষের সঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সিগনেচার ছবিটি বানিয়েছেন ট্যুরিজমের ওপর। এবারে উৎসবে ফোকাস কান্ট্রি ‘জার্মানি’।