অনিরুদ্ধ ধর ও সৌভিক ঘোষফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো থেকে শুরু হল বিভ্রাটের পালা৷ বিদেশি অতিথির সামনে কলকাতার মাথা হেঁট করে সে পালা চলল দিনভর !সোমবার সকাল নটা৷ জনসাধারণের জন্য ১৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম শো৷ নন্দন -১ প্রেক্ষাগৃহ৷ ফরাসি পরিচালক ক্যাথরিন ব্রেইয়ার ‘দ্য অ্যাবিউস অফ উইকনেস ’৷
সাবটাইটেল -বিভ্রাটে ৪৫ মিনিট পরে ফের গোড়া থেকে শুরু করতে হল ছবি দেখানো৷
দুপুর তিনটে৷ সেই নন্দন -১৷ বিখ্যাত ইজরায়েলি পরিচালক আমোস গিতাইয়ের ‘অ্যানা অ্যারেবিয়া৷ ’ আবার বিপত্তি সাবটাইটেলে৷ উত্সবের অতিথি হিসেবে তাঁর প্রিয় সত্যজিত্ -ঋত্বিক -মৃণালের কলকাতায় আসা গিতাই ক্ষোভে -বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলেন , কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত দেখানোই গেল না তাঁর ছবিটা ! ঘণ্টা তিনেক পরে মুখরক্ষা হল , তা-ও দর্শকদের সৌজন্যে৷
প্রথম ঘটনাটাই ধরা যাক৷ মন্তাজ -ক্রেডিট শেষ হয়ে ছবির প্রথম দৃশ্য শুরু হতে না -হতেই হলে তুমুল হট্টগোল৷ এ কী , সাবটাইটেল কোথায় ? উত্সবের সব কালচার ধুয়ে দিয়ে হলজুড়ে টিটকিরি , টিপ্পনি , রসালো মন্তব্য , গালাগাল৷ কর্তৃপক্ষ কিন্ত্ত নির্বিকার , ছবি চলছে সাবটাইটেল ছাড়াই৷ মিনিট পনেরো -কুড়ি পরে কয়েকজন সিনেপ্রেমী দল বেঁধে হানা দিলেন উপরের প্রোজেকশন রুমে৷ তাঁদের রাগত প্রশ্ন, ফেস্টিভ্যালে এটা কি ইয়ার্কি হচ্ছে ? প্রশ্নটা যাঁদের করা হল , তাঁরা তখন অন্ধের মতো জবাব এবং সাবটাইটেল দুটোই হাতড়াচ্ছেন৷ একজন মিনমিনে গলায় জানালেন , রবিবার রাতে ‘চেক ’ করা হয়েছিল৷ সোম -সকালে সেই সাবটাইটেলই নাকি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ এই চাপানউতোরের নিট ফল ? সাড়ে নটার সময় বেমালুম বন্ধ স্ক্রিনিং৷ জ্বলে উঠল হলের সব আলো৷ এই দশা চলল মিনিট পাঁচেক৷ তার পর শুরু, না ফিল্ম নয় ! বিশৃঙ্খলার পরবর্তী পর্যায়৷ একবার নতুন করে মন্তাজ শুরু হয়ে তো পরের মুহূ্র্তে চালু হয়ে যায় ফিল্মটাই , কিন্ত্ত মাঝখান থেকে মাথামুন্ডুহীন ভাবে৷ আর সাবটাইটেল ? তখনও তোমার দেখা নাই রে !৯ .৩৭ -এ হলে আবার শোরগোল৷ এসেছে , এসেছে , সাবটাইটেল এসেছে ! কিন্ত্ত ছবির সিকোয়েন্সের সঙ্গে মিলছে না তো ! যেখানে একটি মাত্র শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে অসম্ভব কষ্ট পাচ্ছেন এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত মহিলা , সেখানে সাব -টাইটেলে ভেসে উঠছে তাঁর মুখে গালাগালি ! সংলাপ আর সাবটাইটেলকে একগতে (সিনক্রোনাইস ) করাতে গিয়ে আবার টানাহ্যাঁচড়া , আবার ছবি দেখানো বন্ধ৷ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবই বটে !শেষ পর্যন্ত সাবটাইটেল -সহ ছবি শুরু হল ৯ .৪৫ -এ৷ কিন্ত্ত ঝাড়া পৌনে একঘণ্টার বিঘ্নে তত ক্ষণে তাল কেটেছে প্রথম শোয়ের৷ ছিছিক্কার করে তিতিবিরক্ত দর্শকদের অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন হল ছেড়ে৷
আর দ্বিতীয় ঘটনাটায় তো পরিচালক আমোস গিতাই নিজেই বেরিয়ে গেলেন হল ছেড়ে৷ ফিল্ম শুরু হওয়ার আগে যিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেছেন সত্যজিত্ -ঋত্বিক -মৃণালের মতো ‘গ্রেট মাস্টার ’-এর ঋণ , তিনি অবাক হয়ে দেখলেন , আধ ঘণ্টা ধরে বার ছয়েক চেষ্টা করেও কিছুতেই সিনক্রোনাইস করা গেল না তাঁর ছবির সাবটাইটেল৷ অগত্যা চলচ্চিত্র উত্সবের অধিকর্তা যাদব মণ্ডলকে ঘোষণা করতে হল , তাঁরা ছবিটা দেখাতে পারছেন না৷ সেটা পরে কোনও দিন দেখানো হবে৷ তাতে গিতাইয়ের রাগ বেড়েছে বই কমেনি৷ রেগেমেগে তিনি চলে গিয়েছিলে হোটেলে৷ অনেক সাধ্যসাধনার পর তাঁকে ফেরত আনা হয়৷ গিতাই একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করার পরে , সন্ধ্যা ৬.১৫ -এ সেই নন্দন -১ -এই তাঁর ছবি দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়৷ কিন্ত্ত ফের বিভ্রাট৷ তালমিল নেই সাবটাইটেলের সঙ্গে সংলাপে৷ অধিকর্তা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলেন , আপনারা কি এই অবস্থাতেই ছবিটা দেখতে চান ? ৭০ শতাংশ দর্শক সায় দেওয়ায় অবশেষে মুখরক্ষা কলকাতার৷
কেন এই বিপত্তি ? কর্তৃপক্ষ কী বলছেন ? যাদববাবু মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ দু’-একজন কর্তাব্যক্তি ‘ওটা আসলে টেকনিক্যাল ফল্ট ’ বলেই নন্দনের ঠান্ডা ঘরে সেঁধিয়েছেন৷ ভিতর থেকে জানা যাচ্ছে , এ বার উত্সবে ডিজিট্যাল সিনেমা প্রোজেকশন (ডিসিপি ) প্রযুক্তিতে দেখানো হচ্ছে সিনেমা৷ নতুন এই প্রযুক্তিতে সাবটাইটেল কী ভাবে ব্যবহার হয় , তা নাকি ধাতস্থই হয়নি কর্তৃপক্ষের৷ আর গিতাইয়ের ছবির ক্ষেত্রে মূল প্রিন্টের মাস্টারিংয়েই গোলমাল ছিল৷ কিন্ত্ত সেটা কেউ ঠিকমতো দেখে না -নেওয়ার ফলেই এত গোলযোগ৷ দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা চলচ্চিত্র উত্সবে আসছেন , তাঁরা বলছিলেন , এত বড় বিপত্তি , মায় ছবি বাতিল হয়ে যাওয়ার কোনও ঘটনা তাঁদের মনে পড়ছে না৷ তাই সাবটাইটেল -বিভ্রাটের পর সন্ধ্যার নন্দন চত্বরে ভাসছিল সুরসিক মন্তব্য , ‘এ বার থেকে তো দেখছি আলিয়ঁস ফ্রাঁসে দ্যু কলকাতা , ম্যাক্স মুলার বা গোর্কি সদন থেকে বিদেশি ভাষার ক্র্যাশ কোর্স করে ফেস্টিভ্যালে আসতে হবে !