তিলোত্তমার এখনকার যে চেহারা অর্থাৎ হাইরাইজ বিল্ডিং এসব বিজ্ঞান -প্রযুক্তির সফল ব্যবহার হলেও হঠাৎ করে এর সূচনা হয় নি। বহুতল বাড়ি তৈরির ধারণা আজ নয় সে বহুদিন আগের কথা। এখন প্রশ্ন হলো ঠিক কবে থেকে হাইরাইজ বিল্ডিঙের ধারণা এলো ? এর উত্তর সন্ধানে আবারো কলকাতার ইতিহাসের দিকেই ফিরে তাকাতে হবে। আজ জানবো কলকাতার প্রথম ত্রিতল বাড়ির ইতিহাস ।
কলকাতার প্রথম ত্রিতল বাড়ি হলো রাইটার্স বিল্ডিং। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল এই রাইটার্স বিল্ডিং। ঐতিহাসিক কারণ তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড। অবশ্য শুরুটা প্রশাসনিক কাজ দিয়ে হয় নি।
আজকে যে জায়গায় রাইটার্স বিল্ডিং, সেখানে এক সময় ছিল সেন্ট অ্যান’স গির্জা। ১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলার কলকাতা আক্রমণের সময় এটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরে এই গির্জার স্থান এবং এর সংলগ্ন প্লটটি থমাস লিয়নকে দেওয়া হয়, যার নামানুসারে ওই স্থান লিয়ন্স রেঞ্জ নামে পরিচিত হয়। ১৭৭৭ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য থমাস লিয়ন রাইটার্স বিল্ডিং ডিজাইন করেন। ১৮০০ সালে প্রাচ্য ভাষায় ব্রিটিশ কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য চালু করা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ পরে এই ভবনে চলে আসে। পরবর্তী ২০ বছরেরও বেশি সময়ে কাঠামোগত পরিবর্তন হতে থাকে। পরে ৩২ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি ছাত্রাবাস এবং একটি পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে, যা এখনও বিদ্যমান। ১৮২১ সালে প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় প্রতিটি ৩২ ফুট উঁচুতে আয়নিক কলামগুলির সাথে একটি ১২৮ ফুট দীর্ঘ বারান্দা যুক্ত করা হয়। ১৮৩০ সালে আবার ভবনটির কার্যকরিতা পরিবর্তন ঘটে গোডাউনে পরিণত হয় ।
এর কিছুকাল পর ১৮৭১-৭৪ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর-জেনারেল জর্জ ক্যাম্পবেল কাজের জন্য সচিবালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ১৮৮২ সাল নাগাদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তৎকালীন বেঙ্গল সেক্রেটারির যাবতীয় অফিস, দফতর সব কিছু এখানে নিয়ে আসা হয়। সেই অনুযায়ী এই তিনতলা বিল্ডিংকে আরও একটু মেরামত করা হয়। তৈরি হল কলকাতার অতি পরিচিত ‘লাল বাড়ি’। শহরের প্রথম তিনতলা। যা আজও কলকাতার ঐতিহ্য।