ঋতু বদলের সময় বেশ কাহিল করে হাঁপানি বা অ্যাজমা। সর্দি কাশির মত সাধারণ সমস্যার সঙ্গে অ্যাজমা যোগ হলে তখন সমস্যা আরও বাড়ে। অনেক সমইয় জরুরী চিকিৎসার দরকার হয়ে পড়ে। তবে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সেই বিষয়ে পরামর্শ দিলেন বাইন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ প্রিয়াঙ্কা ঘোষ।
তিনি জানিয়েছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট বাড়ার পিছনে বড় কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ইনফেকশন, সেটাই ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা। ভাইরাল ইনফেকশন থেকেই এটা বিশেষ করে হয়। যাদের আগেই কোনও অসুখ আছে যেমন অ্যাজমা, সিওপিডি, ফুসফুসের কোনও সমস্যা বা অন্য ধরনের কোনও অসুখ ডায়াবেটিস হোক বা ভাইপার টেনশন তাদের ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে শ্বাসকষ্টের প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। যাদের এরকম কোনও অসুখ নেই তাদেরও দেখা যাচ্ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যাদের অ্যাজমা, সিওপিডি আছে তাদের তো সমস্যাটা আরও বেশি। ঋতু পরিবর্তনের সমইয় আবহাওয়া যেহেতু বদলে যায় তাই শ্বাসকষ্টের প্রবণতা আরও বাড়ে।
অ্যাজমা আসলে কী?
অ্যাজমা আসলে অ্যালার্জির অসুখ, আমাদের রেস্পেটরি সিস্টেমের অ্যালার্জি, এটা মাদের নাক, গলা, বুক, ফুলফুস সব কিছুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। কখনও ধুলো-ধোঁয়ার প্রভাবে কখনও খাবারের প্রভাবে আবার কখনও ঠাণ্ডা গরম মানে তাপ মাত্রার জন্য আমাদের শ্বাসনালী ভীষণভাবে অ্যালার্জিপ্রবণ হয়ে যায়। শ্বাসনালী সরু হয়ে গিয়ে বুকে চাপ অনুভূত হয়, সাঁই সাঁই আওয়াজ হওয়া, প্রচন্ড শুকনো কাশি হইয়। শ্বাসনালী সরু হয়ে যাওয়ার কারণে কাশি শুরু হইয়।
অজ্যামা অ্যালার্জির অসুখ। কোল্ড এলার্জি, ধূলোর অ্যালার্জি, খাবারে অ্যালার্জির মতো যাদের অ্যালার্জি আছে, তারা বেশি আক্রান্ত হন। আবার যাদের নেই তাদেরও হতে পারে।
অ্যাজমা এমন একটা অসুখ যেটা যে কারুর হতে পারে। জন্মের পর থেকেও বাচ্চাদের হতে পারে আবার ৫০ বছর বয়সে এসেও আক্রান্ত হতে পারে। ইনহেলার ব্যবহারে ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে যায়, সেখানকার অ্যালার্জি কমায়, খাবার ওষুধ দিলে তা খাদ্যনালীর মাধ্যমে অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে কিন্তু ইনহেলার ব্যবহার করলে অন্য কোনও অঙ্গে তা যায় না। সেই দিক থেকে বলা যায় ইনহেলার সবচেয়ে নিরাপদ।
অ্যাজমার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ। ইনহেলার বা ওষুধ দিলেই যে এই রোগ সেরে যাবে তা নয়, নিমমিত চিকিৎসা করাতে হবে যাতে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইনহেলার ঠিকমতো ব্যবহার না করলে আস্তে আস্তে ফুসফুস তার কার্যক্ষমতা হারাবে, দুর্বল হয়ে পড়বে। যত বয়স বাড়বে তত শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়তে থাকবে।
সিওপিডি কী?
সিওপিডি ও অ্যাজমা দুই টার্মকে একে অপরের পরিপূরক মনে হলেও তারা কিন্তু মোটেই এক নয়। সিওপিডি হয় প্রধানত ধূমপায়ীদের। এছাড়া যারা কাঠ কয়লার উনুনে রান্না করেন তাদেরও হয়। রাস্তার ধোঁয়া, বায়ুদূষণ এসবও কারণ। অ্যাজমা একটা অ্যালার্জিক অসুখ এক্ষেত্রে ইনহেলার ট্রিটমেন্ট চলে, সিওপিডিতে কিন্তু মেডিকেল ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
যে সমস্ত অ্যাজমা রোগী বাড়িতে থাকেন তাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ধূলো থেকে। ধূলোর ধারে কাছে থাকা যাবে না। পুরণো কাগজপত্র, পুরনো শীতের জামাকাপড়, এগুলো থেকে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া ঘরোইয়া ব্যবহারের জিনিস যেমন ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডারের ধোঁয়া, গন্ধ, ধূপ-ধূনোর ধোঁয়া শ্বাসকষ্টের বড় কারণ। ফুসফুসের জন্য এইসব ধোঁয়া অত্যন্ত খারাপ।
অ্যাজমা, সিওপিডির ক্ষেত্রে চিকিৎসা ‘নিয়ন্ত্রণ’। ফুসফুসকে ভাল রাখতে এটা দরকার। এছাড়া শরীরচর্চা, সাঁতার অ্যাজমা রোগীদের জন্য খুব ভাল। আর প্রতিরোধের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন অ্যাজমার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা ইনহেলার।