পিরিয়ডের দিনগুলোতে রাগ, বিরক্তি, খিটখিটে মেজাজ? আপনার বা আপনার সদ্য যৌবনে পদার্পন করা কন্যাটি কি এই নিয়ে ভীষণ চিন্তিত? বুঝতে পারেন না এমনটা কেন হয়? বুঝতেও পারেন না কিভাবে এই সময় মুড ঠিক রাখবেন? অনেকেই বুঝতে পারেন না পিরিয়ড এর সময় মুড্ সুইং কেন হয়?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পিরিয়ডের সময় মুড সুইং-এর জন্য দায়ী ‘পিএমএস’ হচ্ছে প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম। এই পিএমএস যেকোনো বয়সের নারীদের মধ্যেই দেখা যায়। একজন নারী সন্তানধারণে সক্ষম কিনা তার জানান দেয় পিরিয়ড। মাসের সেই নির্দিষ্ট সময়ে মুড সুইংয়ের সাথে সাথে নানা শারীরিক সমস্যা হতে শুরু করে। সেই সময় বিনাকারণে মাথা যন্ত্রনা থেকে শুরু করে গা হাত পা ব্যথা, পেট ব্যথা, বমিভাব এমনকি বমি পর্যন্ত হয় অনেকের।মেন্সট্রুয়েশনের দিন দশেক আগে থেকেই শুরু হয় এই সব সমস্যা।চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মাসের ওই বিশেষ দিনগুলির প্রতি একটু যত্নবান হলেই অনেকটা উপশম হয় এই কষ্টের।
মেয়েদের শরীরের নানা কাজকর্মের জন্য মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে দুটি ফিমেল হরমোন, ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন। এই দুই হরমোনের তারতম্যের ফলেই মেন্সট্রুয়েশনের সপ্তাহখানেক আগে থেকে দেখা দিতে থাকে প্রি মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম।কিছু মেয়ের ক্ষেত্রে এই সিম্পটম খুব বেশি সমস্যার সৃষ্টি না করলেও কিছু মেয়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলোই এতটা প্রকট হয়ে ওঠে যে তাদের অফিস বা স্কুল যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রত্যেক মহিলাই নিজেদের শরীরে প্রতিমাসে একটা না একটা প্রি মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম লক্ষ্য করে থাকেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে এইসব সিনড্রোম।
মাথা যন্ত্রনা, ব্লটিং, পেট ব্যাথা, পেশিতে ব্যথা, বারবার খিদে পাওয়া, মুখে ব্রণ প্রভৃতির মতো হাজার এক লক্ষণ। উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন, বারবার কান্না পাওয়া, অনিদ্রা, একা থাকতে চাওয়া, রাগ থেকে রিয়্যাক্ট করার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে এইসব লক্ষণ প্রকাশ পেলেও এইসব লক্ষণ কি কারণে হয় তা এখনো অজানাই রয়ে গেছে। তারা জানাচ্ছেন, এই পিএমএসকে প্রভাবিত করে ধূমপান, অতিরিক্ত স্ট্রেস, নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম না হওয়া, ডিপ্রেশন প্রভৃতি।
গাইনোকোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, এইসময় নারীদেহে ফিমেল হরমোনের তারতম্যের জন্যই প্রকাশ পায় এইসব লক্ষণ। অযথা রাগ হওয়া, কষ্ট হওয়া, খিদে পাওয়া সবটাই ঘটে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের তারতম্যের জন্য। এই দুই হরমোনের তারতম্য প্রভাবিত করে সেরোটোনিনের লেভেলকে। এরফলে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি দেখা যায় এইসব মানসিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞের মতানুযায়ী, ডায়াবেটিক রোগীদের এইসময় মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। নানা গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে ডায়াবেটিসের ধাত আছে সেইসব পরিবারের মেয়েদের পিএমএসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নারীশরীরে হরমোন তার খেল দেখাবেই কিন্ত তার থেকে রেহাই পেতে হলে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। যেমন বদল আনতে হবে লাইফস্টাইলে। খাবারের তালিকায় সংযোজন করতে হবে দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য, প্রচুর গ্রিন ভেজিটেবলস, ভিটামিন, মিনারেল এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, লো কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এবং মরশুমি ফল।
গাইনোকোলোজিস্টরা জানাচ্ছেন, পিরিয়ডের সময় ভালো থাকার জন্য সবার আগে প্রয়োজন জীবনযাত্রায় ও খাদ্যাভ্যাসে খানিক পরিবর্তন আনা। সর্বোপরি নিজেকে ভালো রাখলেই বশে থাকে বেশিরভাগ সমস্যা তা সে শারীরিক হোক কিংবা মানসিক। তারা জানাচ্ছেন, মুড সুইংয়ের সমস্যা থাকলে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে মিউজিক থেরাপির। এইসময় হালকা যোগাসনও মনকে ভালো করতে সাহায্য করে থাকে। এইসময় অনেক অফিস এখন মেন্সট্রুয়াল লিভের সুবিধা দিয়ে থাকে। ছুটি পেলে সেইকটা দিন নিজের সাথে সময় কাটান দেখবেন ভালো লাগবে।