আকাশের গায়ে যখন রঙ ধরে, আমরা নানা কল্পনার জাল বুনি। এই যেমন আকাশে কালো রং ধরলে, বৃষ্টির কল্পনা। আবার বিকেলের আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখে অলীক কোন দেশে পাড়ি দেওয়ার কল্পনা। কখনো ঝলমল করা নীল আকাশ দেখে সোনা রোদের কল্পনাতেও মেতে উঠি আমরা। শৈশব তেমনি কল্পনায় মোড়া বাস্তব দিনের সম্ভার। সেখানে নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দ থাকে, বাস্তব দিয়ে সাজানো স্বপ্নের ডানা মেলে কল্পনার আকাশে ওড়ার প্রতিশ্রুতিও থাকে। শৈশব আর কৈশোরের সন্ধিক্ষণ একজন মানুষের জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। সেই সন্ধিক্ষণে বাস করে সেই সমস্ত মুহূর্তেরা যাদের আঁকড়ে ধরে আগামী জীবনের দিক নির্দেশিত হয়। শৈশবের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা স্বপ্নেরা কিছু কিশোরের স্বতন্ত্র জীবন গড়ে দেয়। গোয়েন্দা গোগোলের গল্পগুলো তেমনি স্বতন্ত্র। গোয়েন্দা গোগোলের ওই বয়সেই গড়ে ওঠা স্বাতন্ত্র্য চরিত্র তাকে সাহসী ও বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
সমরেশ বসুর সৃষ্টি এই গোয়েন্দা চরিত্রটি। ডাক নাম গোগোল। ভালো নাম উদয় কুমার চট্টোপাধ্যায়। বাবা-মা'র আদরে বড় হয়ে ওঠা গোগোলের স্বপ্ন মার্শাল আর্ট শিখে ওই বিষয়ে পারদর্শী হওয়া। গোগোল সাহসী, বুদ্ধিমান, অনুসন্ধিৎসু এবং কৌতুহলী। শুধুমাত্র পড়াশোনা নয়, অন্য বিষয়েও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। কোনোরকম অ্যাডভেঞ্চারে যেতে সে কুণ্ঠা বোধ করে না। তাঁর বাবা-মা ভয় পেলেও সন্তানের সাহসিকতাকে উৎসাহই দেন। লেখকের এই ধরনের সাহিত্য সৃষ্টি সমস্ত বাবা-মায়ের কাছে বার্তা স্বরূপ যে সঠিক উৎসাহ এবং পরিচর্যা পেলে সমস্ত শিশুই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে নিজ নিজ ক্ষেত্রে। গোগোলের বাবা সমীরেশ চট্টোপাধ্যায় রাশিয়ান লেখক নিকোলাই গোগোলের ভক্ত। তাই তিনি সন্তানের নাম রেখেছিলেন গোগোল। গোগোল বাবা-মায়ের বাধ্য সন্তান। কিন্তু নিজের কৌতুহল মেটাবার জন্য কখনোই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ভয় পায় না। সেখানে সে বাবা-মায়ের পূর্ণ উৎসাহ পায়। এই ধরনের চরিত্রই তাকে রহস্যসন্ধানী করে তোলে। মার্শাল আর্ট বিদ্যার প্রতি উৎসাহ তাকে সাহস জোগায় রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে। কৈশোর বয়সেই সে মোকাবিলা করে দুঁদে সব ক্রিমিনালদের সঙ্গে।
সমরেশ বসুর এই গোয়েন্দা-সাহিত্য যে কোন বয়সের পাঠকের কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। লেখকএর গল্পগুলো সাধারণত আনন্দমেলা এবং শুকতারা পত্রিকায় প্রকাশ পেত। তারপর বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই শিশু গোয়েন্দার প্রথম আবির্ভাব "ইঁদুরের খুট খুট" গল্পে। সর্বশেষ প্রকাশিত তার গল্পটি হল "টেলিফোনে আড়ি পাতার বিপদ"। কিশোর গোগোল অনেক বিপদের মুখে পড়েছে তার কম বয়সের জন্য। তেমনি অনেকক্ষেত্রেই অনেক মানুষের সাহায্য পেয়েছে সে। যেমন নৈহাটির এক প্রাইভেট ডিটেকটিভ অশোক ঠাকুর গোগোলকে অনেক রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। গোয়েন্দা সাহিত্যে শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য সৃষ্ট গল্পগুলো অনেক কাহিনীর থেকেই অন্যরকম হয়। বুদ্ধিমত্তার মার প্যাঁচ দিয়ে রহস্য সমাধানেই অ্যাডভেঞ্চারের উৎস, এমনটা শিশু বা কিশোর সাহিত্যের ক্ষেত্রে হয় না। সেখানে কিছু উৎসাহমূলক তথ্য, দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প পাঠকদের আগ্রহী করে তোলে। গোগোলের গল্পগুলোর বুনট ঠিক এরকমই। তাই অনায়াসেই এই সাহিত্য পাঠকের মন জয় করেছে। আগামী দিনের শৈশব ও কৈশোরকে এসব সাহিত্য সঠিক পথে যাত্রা করতে সাহায্য করবে এমনটা আশা করাই যায়।