বীরভূম, যে অঞ্চলের কথা মাথায় এলেই মনে আসে একরাশ আবেগ আর নস্টালজিয়া| সেই অঞ্চলেরই বহুলভাবে প্রচলিত বহু জিনিসের মধ্যে একটি হলো খেশ শাড়ি| পুরানো সুতির কাপড় ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছোট সরু দড়ির মত বানিয়ে তা দিয়েই তৈরী করা হয় খেশ শাড়ি| এক একটি পুরানো সুতির শাড়ি থেকে বেরোয় ৮০ থেকে ৮৫ টি লাছি সুতো| আর যে সুতোয় এই শাড়ি বোনা হয় তা আসে নবদ্বীপ থেকে| পুরানো দিনের মা ঠাকুমাদের নকশী কাঁথার নকশাকেই এই শাড়ি তে তুলে ধরা হয়েছে নতুন ভাবে যা এখন বীরভূমের বহু শিল্পীর রুজিরুটি| শুধুই শাড়ি নয় খেশের চাদর ব্যাগ, জামাকাপড়, পর্দা ইত্যাদিও রুচিসম্মত বাঙালির ঘরে আজ শোভা পায়|
এই শাড়ি বানানোয় মহিলাদেরও একটা বড় ভূমিকা থাকে| একটি শাড়ি থেকে বেরোয় প্রায় ৮০টি কাপড়ের ফালি| এরপর তা রং করে চরকায় ফেলে সমান করে বসানো হয়, তাঁতেও বোনা হয় সুতির কাপড়ের ফালি| তবে এখানেও রয়েছে খানিক পার্থক্য, কারণ বিভিন্ন জিনিস বানানোর জন্য প্রয়োজন পড়ে এক এক রকমের সংখ্যার কাপড়ের ফালি| যেমন সিঙ্গল বেডের চাদর তৈরির জন্য পুরানো কাপড়ের ফালি লাগে প্রায় ছটা ডবল বেডের চাদরের জন্য লাগে প্রায় দশটা| বেশ সময়সাপেক্ষ ও পরিশ্রমসাধ্য এই কাজ, এক একজন শিল্পী সারাদিনে দু থেকে তিনটির বেশি শাড়ি তৈরী করতে সক্ষম হন| এ তো গেলো শাড়ি তৈরির মূল রসদের কথা| এবার আসা যাক শাড়ির চাহিদার কথায়। বীরভূমের বোলপুর সহ বহু জায়গাতেই এই শাড়ি তৈরী চলছে রমরমিয়ে| উল্লেখ্য, যেহেতু এই শাড়ি শিল্প বোলপুরের এক সম্পদ বলা যায় আর সেখানে রবিঠাকুরের কোনো অবদান থাকবে না তা কখনো হয়? এই খেশ শাড়ি তৈরির নেপথ্যেও রয়েছেন রবিঠাকুর| এই শিল্পকে তুলে ধরতে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন| কাঁথা সেলাইয়ের পদ্ধতি অবলম্বনে বিশ্বভারতীর শিল্পী শিক্ষকরা তা ঘষে মেজে নিয়েছিলেন| পুরানো কাপড় ছাড়া এই শাড়ি তৈরী সম্ভবই না। বীরভূমের তাঁতিরা এই শাড়ি তে নিজেদের হাতের কাজ তুলে ধরেন অসাধারণ ভাবে| খোয়াই কিংবা সোনাঝুরির হাটে দেদার বিকোচ্ছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে এই শাড়ি| তবে রুচিশীল বাঙালি এই শাড়ি কিনলেও খোঁজ নিই কি আমরা একবারও কেমন আছেন এই শাড়ি বানানোর সাথে যুক্ত মানুষগুলো? শিল্পীরা কি পাচ্ছেন তাদের সম্মান? এইসবের অভাবে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম চলে যাচ্ছে অন্য পেশাকে বেছে নিতে বাংলার সাথে এত নিবিড় সম্পর্ক যে শাড়ি তৈরির তাকে বিলুপ্তির পথ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও তো নিতে হবে আমাদেরই|