কেরালার একটি ছোট্ট গ্রাম ভাঙ্গেরি। দক্ষিণ ভারতের আর পাঁচটা গ্রামের থেকে খুব অন্যরকম নয়। কিন্তু এই গ্রামের মানুষরা সারা দেশের কাছে তাঁদের গ্রামকে ‘মডেল’ বানিয়ে তুলেছেন।
প্রত্যেকের বাড়িতেই এক টুকরো বাগান রয়েছে। সেখানে নিজেদের রান্না ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় সবজি নিজেরাই চাষ করেন। ঢ্যাঁড়শ, টমেটো, লাউ, শিম, বেগুন, এছাড়াও ফল এবং শাকসব্জিও ফলানও হয় বাগানে
২০০৬ সালে প্রেসিডেন্সি উইমেন্স কলেজের ছাত্রীদের ন্যাশনাল সার্ভে স্কিমের একটি সমীক্ষা করেন, তাতে
উঠে আসে ১০১ গ্রামবাসীর মধ্যে ৭ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ৫ জন মহিলা।
বিশেষ করে গ্রামের মহিলাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সারা গ্রামের মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছিল। টিভি, রেডিয়ো, মিডিয়াতে ধূমপান বা নেশার জেরে ক্যান্সার হয় এই কথা প্রচার করা হয়। কিন্তু এই গ্রামে ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলারা কেউই ধূমপান বা নেশা করত না।
পাঁচ ক্যান্সার আক্রান্ত একটি সোসাইটি গড়ে তোলে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব তার সমাধানের পথ খোঁজা এবং মানুষকে ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলাই এই সোসাইটির উদ্দ্যেশ্য।
সোসাইটি বিশেষজ্ঞদের কাছে যায়। মহিলাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে তা জানার জন্য।
সমস্ত রকম পরীক্ষা করে দেখা যায়, গ্রামের মহিলা নিয়মিত ভাবে প্লাস্টিক, ফোম পোড়ান। তা থেকে টক্সিক উপাদান নির্গত হয়। এর পাশাপাশি বাজার থেকে কিনে আনা সবজি। যাতে রাসয়নিক সারের ব্যবহার অত্যন্ত বেশি।
গ্রামে বাস করলেও বাসিন্দারা কেউই কৃষির পেশায় যুক্ত নন। আইটি বা অন্যান্য পেশায় চলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে জীবনযাত্রার ধরন তাই বাইরের খাবার, পণ্য সবজি গ্রামের জীবন যাত্রাকে রাতারাতি বদলে দিয়েছিল। প্লাস্টিকের ব্যবহার জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।
সোসাইটির এক সদস্য বলেন, ‘এই যখন পরিস্থিতি তখন গ্রামের পুরনো মানুষরা বলেন, অতীতে এই গ্রামে কোনওদিন বাজারের সবজি আসেনি। ধান থেকে শুরু করে ফল, সবজি নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই গ্রামের ক্ষেতে উৎপাদিত হত।’
তাদের এই কথাই গোটা গ্রামকে দিশা দেখায়। ফিরে আসে পুরনোতে। এই সোসাইটি গ্রামে প্লাস্টিক বয়কটের জন্য মানুষকে বোঝানো শুরু করল। বাড়ির পাশে ফেলে রাখা জমি পরিষ্কার করে আবার সবজি চাষ আরম্ভ করল গ্রামের মানুষ।
এই সময়ই আরও একটি ঘটনা ঘটল। তামিলনাড়ুর মাল্লাপুরামে সবজি ভর্তি একটি ট্রাক উলটে যায়। ট্রাকের সবজির বেশির ভাগটাই রাস্তার পাশের জলাশয়ে গিয়ে পড়ে। পরদিন সেখানে মাছ আর জলজ প্রাণীদের দেহ ভেসে ওঠে।
তাই দেশে মানুষ আরও বেশি করে সচেতন হয়ে ওঠে। তারা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে বাড়িতে কম্পোস্ড সার তৈরি করতে শুরু করেন। প্রায় ৬০ দিনের মধ্যেই বদলাতে শুরু করে গোটা গ্রামের ছবি।
প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ও বোতলের পরিবর্তে পাট ও মাটির ব্যাগ, পাত্র গ্রামবাসীরা নিজেরাই উৎপাদন করতে শুরু করে। কর্মসংস্থানের অন্যদিক খুলে যায়।
পারিবারিক বা গ্রামীণ অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে শস্য বীজ দেওয়ার চল শুরু হয়। এভাবে ৬৩ একর জমিকে ‘অরগ্যানিক ফিল্ড’-কে পরিণত করেন তাঁরা।
২০০৮ সালে এই গ্রামকে কেরালার ‘অরগ্যানিক ওয়ার্ড’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ভাঙ্গেরির ‘অরগ্যানিক পলিসি’কে সারা রাজ্যের জন্য গ্রহণ করেন।