পশুদের প্রতি ভালবাসা ছিল রক্তেই| পরিবারের সবাই যুক্ত ছিলেন সার্কাসের| ঠাকুরদা ছিলেন দ্য গ্রেট মালাবার সার্কাসের প্রতিষ্ঠাতা| কেরালার কোজিকোড়ের বাসিন্দা ২৭ বছরের শাবানা সুলেইমান পেশায় ডাক্তার, দুবাইপ্রবাসী ছিলেন | ডাক্তারি ছাড়াও আরো একটা বিষয় ছোটবেলা থেকেই টানতো তা হলো পশুদের প্রতি ভালবাসা আর কৌতুহল । যেখানেই গিয়েছেন পশুদের ভাব ও ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছেন, এই নিয়ে পড়াশোনা করেছেন বিস্তর। এবার তাঁর ইচ্ছা হাতিদের স্বভাব ও আচরণ নিয়ে একটি বই লেখার| তাই ডাক্তারি পেশা ছেড়ে এসেছেন ভারতে শিখছেন মাহুত হওয়ার প্রশিক্ষণ| যদি সবদিক ঠিক থাকে তাহলে পালাক্কাডে আসন্ন মন্দির উতসবে প্রধান হাতি মানিশেরি রাজেন্দ্রনের মাহুত হবেন শাবনা। এর আগে কেরালার মুসলিম সম্প্রদায় থেকে কোনও মহিলা মাহুত হননি।
ওট্টাপ্পালামের হাতি বিশেষজ্ঞ মনিশেরি হরিদাসের কাছে হাতি নিয়ে পড়াশোনা করছেন শাবানা| তাঁর পরামর্শেই হাতে কলমে কাজ শেখার জন্য যোগাযোগ পালাক্কাড জেলার ওট্টাপালামে অবস্থিত বিখ্যাত ভারিক্কাসেরি মানা-এ| এখানে প্রচুর হাতির বসবাস| এখানকার হাতিদের নিয়েই মন্দিরের উত্সবে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়| প্রথমে অবশ্য কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না শাবানার পক্ষে কারণ তাঁর প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিলেন না কেরলের কট্টর হিন্দু পুরোহিতরা | প্রথমত শাবানা মুসলিম, দ্বিতীয়ত মহিলা| মন্দির উৎসবে হাতিদের সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি করা থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া— সব দায়িত্বই একজন মুসলিম তরুনীর হাতে দিতে গোড়ার দিকে সকলেই দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন| কিন্তু হাতির দলের সবচেয়ে জাঁদরেল ও তেজি হাতি মনিশেরি রাজেন্দ্রনকে পোষ মানিয়ে পুরোহিতদের সমস্ত দ্বিধা জয় করে ফেলেছেন শাবানা| কেরল মন্দির উৎসবে হাতিদের দলে রাজেন্দ্রনই প্রধান। এমন বিশাল দাঁতালকে বাগে আনতে পারেননি কোনও পুরুষ মাহুতই, সেই বিশালকায় দাঁতাল যখন পাঁচ ফুটের ছোটখাটো চেহারার শাবানার সামনে শান্ত, নিস্তেজ যেন পোষা হাতিটি হয়ে ওঠে তখন এটা প্রমান হয়ে যায় পশুরাও ভালবাসার ভাষাই বোঝে|
কারণ শাবানা জানিয়েছেন, হাতিদের গলায় বা হাতে-পায়ে শিকল পরানো হয় না। ওরা ছাড়াই থাকে। শিকল নয় মনের টানেই ওদের সঙ্গে আত্মার বাঁধন তৈরি হয়েছে।ঠিক যেমন আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলি তেমনি ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কথা বলতাম জানিয়েছেন শাবানা| ওরা কী বলতে চায় আমি বুঝতে পারি, তাই হয়তো আমার কথা শোনে, বলেছেন শাবানা। হিন্দু মন্দিরের হাতিদের মহুথয়ার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন, এপ্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, জাত ধর্মকে উর্ধ্বে রেখে নিজের কাজ তা করে যেতে চান| মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং পুরোহিতরাই তাঁকে সম্মান দিয়েছেন, কাজের দায়িত্বও দিয়েছেন। যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন, তিনি তাঁর দায়িত্বে কোনও ত্রুটি রাখবেন না। ডাক্তারি ছেড়ে হঠাৎ মাহুত কেন? শাবানার কথায়, পশুপাখিদের আমি ভালবাসি। তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করি। হাতিদের মনের ভাব আমি বুঝতে পারি। ডাক্তারি ছেড়ে মাহুত হওয়ার সিদ্ধান্তটা অবশ্য শাবানার নিজের।