কেপলার ওয়েসেলস: দুটি দেশের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছিলেন এই খেলোয়াড়

তাঁর আপন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রতিভার বিচ্ছুরণ যখন হচ্ছে তখন বর্ণবৈষম্যের জেরে ক্রিকেট থেকে বহিষ্কৃত হল তাঁর প্রানের প্রিয় মাতৃভূমি। ক্রিকেটের টানে দেশ ছেড়েছিলেন, আবার সেই সূত্র ধরেই ক্রিকেট বিশ্বে দেশ পুনর্বাসিত হতেই  ফিরে আসেন। তাঁর ব্যাট ও দল আগমনেই বুঝিয়ে দিয়েছিল তাঁরা বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করতে এসেছে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক কেপলার ওয়েসেলস।

kepler1

দেশ `কালো তালিকাভুক্ত' হতেই ওয়েসেলস বাধ্য হয়ে পাড়ি দেন অস্ট্রেলিয়ায়। টেস্ট অভিষেক সেই দেশেই। ১৯৮২, ব্রিসবেনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেন প্রথম টেস্ট। ওপেন করতে নেমে ১৬২ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেছিলেন। দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন বব উইলিস-ইয়ান বোথামরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬। অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৭ উইকেটে। প্রথম আট টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন ওয়েসেলস। যতদিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন, ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল।

 

১৯৫৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আজকের দিনে ব্লুমফনটেনে জন্ম ওয়েসেলসের। প্রতিভার নজির রেখেছিলেন ক্যারি প্যাকার সিরিজেও। তাঁর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয় সিরিজের কর্মকর্তারা। ফলে ইয়ান আর গ্রেগ চ্যাপেল এবং ডেনিস লিলিদের সঙ্গে খেলার সুযোগ আসে। এক সাক্ষাৎকারে ওয়েসেলস বলেছিলেন, 'ক্রিকেট সিস্টেমের বাইরে থেকে বছরের পর বছর আমি যা শিখতে পারিনি, চ্যাপেল ভাই এবং লিলিদের সঙ্গে খেলে মাত্র ৬ মাসে তার চেয়ে অনেক বেশি শিখেছিলাম। ইয়ান ছিলেন অধিনায়ক। অত্যন্ত সম্মানিত টিম মেম্বার। আমি তার স্টাইলের ভক্ত ছিলাম। গ্রেগ ছিলেন পারফেকশনিস্ট। তাঁর রান করার ধরনটাই ছিল অন্যরকম। আর ডেনিস লিলির ওয়ার্ক এথিকস আমার জন্য ছিল মানদন্ডের মতো।’

kepler2

অস্ট্রেলিয়াতে আসার পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন ছিল কেপলারের। কুইন্সল্যান্ডের হয়ে ভালো খেলার পর সংবাদমাধ্যমের চোখে আসেন তিনি। ফর্মের চুড়ান্ত অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যাওয়া সহজ ছিল না। আসলে দেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। তাই ব্যান উঠতেই ফেরেন দেশে।

kepler3

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওয়েসেলসের ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের ওপর। সেঞ্চুরি ৬৬টি। হাফ সেঞ্চুরি আছে ১৩২টা। রান ২৪ হাজারের বেশি। অস্ট্রেলিয়া এবং বর্ণবৈষম্যের অভিশাপ মুক্তির পর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলেছেন। ৪০ টেস্টে ৪১ গড়ে ২৭৮৮ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ৬টি। হাফ সেঞ্চুরি ১৫। ওয়ানডেতে ১০৯ ম্যাচে ৩৩৬৩ রান করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই দক্ষিণ আফ্রিকা দেখিয়ে দিয়েছিল তারা মোটেই সহজ প্রতিপক্ষ নয়। ভারতের বিপক্ষে ১৯৯১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যাবর্তনের সিরিজে ছিলেন ওয়েসেলস। এরপর অতি দ্রুত সময়ে শক্তিশালী দলে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এই উত্থানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন ওয়েসেলসেরই। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ওয়ানডে ক্রিকেটে নতুন শক্তি হিসেবে সেমিফাইনাল খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

 

সিডনির প্রথম ম্যাচে তারা ১৭০ রানে অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করেছিল। দুরন্ত পারফরমেন্সের পর নেলসন ম্যান্ডেলা শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...