পুরী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভার্গবী নদীর তীরে অবস্থিত গ্রাম রঘুরাজপুর। গ্রামটিতে বসবাস করেন প্রায় ১৩০ টি পরিবার।
গ্রামের সকলেই শিল্পী। কোন না কোনভাবে শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
রঘুরাজপুর গ্রামকে উড়িষ্যার শিল্পকলার পীঠস্থান বলা হয়।
দশম শতাব্দীতে, জগন্নাথ মন্দির স্থাপনকাল থেকেই এই গ্রামে বসতি স্থাপন হয়। তখন থেকেই শুরু হয় শিল্পের চর্চা।
রঘুরাজপুর গ্রামে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে পট চিত্রের পরম্পরা।
'পট্টচিত্র' একটি সংস্কৃত শব্দ। 'পট্ট' অর্থ বস্ত্র এবং 'চিত্র' অর্থ ছবি। পটচিত্র হলো কাপড়ে আঁকা ছবি। ধারণা করা হয়, এর উৎপত্তি দ্বাদশ শতাব্দীতে।
তসরের বা অন্য সুতির কাপড়ের ওপর আঁকা হয়। প্রথমে তেঁতুল বীজ বা গাছের আঠা লাগিয়ে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে খড়ি মিশিয়ে করা হয় সাদা রং। শুকিয়ে গেলে শুরু হয় ছবি আঁকা। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা হয়। দিয়ে ছবি
পটচিত্র ছাড়াও তালপত্র চিত্র এই গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। তালপাতার ওপর সূচ দিয়ে নক্সা তৈরী করেন শিল্পীরা। তার ওপর রং দেওয়া হয়।
মূলত তিন ধরনের রং ব্যবহার করা হয় পটচিত্রে। লাল, হলুদ এবং নীল। শাঁখের গুঁড়ো, চোখের কাজল এবং সিঁদুর থেকে তৈরি হয় রং। পাথর এবং শাক সব্জির রস থেকেঅ রং তৈরি করেন শিল্পীরা।
মহাপ্রভু জগন্নাথ এবং তাঁকে ঘিরে বিভিন্ন লৌকিক গাথা ছবির মূল বিষয়বস্তু। ছাড়াও বিষ্ণুর দশাবতার, রাসলীলা, গণেশ বন্দনা, দুর্গা বন্দনা, রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণের কাহিনী।
রঙে-রেখায় রঘুরাজপুরের নিজস্ব ঘরানার ছাপ থাকে। দেশের অন্যান্য রাজ্যের পটচিত্রের তুলনায়
রঘুরাজপুরের শিল্পীদের তুলির টান অনেকটাই আলাদা।
পটচিত্র,তালপটচিত্র ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, কাঠের পুতুল পাওয়া যায়।
২০০০ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্র্যাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ রঘুরাজপুরকে ‘হেরিটেজ ভিলেজ’ হিসেবে ঘোষণা করে।