ত্বকের সাথে মনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। মানসিক চাপ থেকে শুরু করে দুশ্চিন্তা শরীরের সাথে সাথে এফেক্ট ফেলে মনেও। কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মানসিক কারণে ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে। সেই রকমই একটি রোগ হলো সোরিয়াসিস। নামটি খুব একটা পরিচিত নয় বটে তবে রোগের লক্ষণগুলি বললে অনেকেই এই রোগটিকে শনাক্ত করতে পারবেন। সোরিয়াসিস হলো এমন একটি রোগ যেখানে শরীরের নানা জায়গায় স্পটেড কিছু দাগ তৈরী হয়। দাগ হওয়া জায়গাটি থেকে চামড়া উঠতে থাকে। বলা ভালো, মাছের আঁশের মতো করে চামড়া উঠতে থাকে। ধীরে ধীরে জায়গাটি খসখসে হয়ে যায় এবং চুলকোতে থাকে। বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেলে সেই জায়গায় ঘা পর্যন্ত হয়ে যায়।
সাধারণত, ত্বকের সবচেয়ে নিচের লেয়ার থেকে কোষ ত্বকের উপরপ্রান্তে আসতে মোটামুটি ২৮ দিন মতো সময় লাগে। কিন্তু সোরিয়াসিসের ফলে এই কোষ মাত্র ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই উপরে চলে আসে। সেই কোষগুলি পূর্ণতা পাওয়ার সময় পায় না। তাই তারা অত্যন্ত শুকনো হয়ে যায় এবং মাছের আঁশের মতো উঠে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালু, কনুই, হাঁটু এবং স্ক্যাল্প এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এই রোগ নিয়ে রয়েছে কিছু ভ্রান্ত ধারণা। প্রথমেই যে ধারণাটির কথা বলা উচিৎ সেটি হলো, মনে করা হয় সোরিয়াসিস ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু একেবারেই তা নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, একসাথে খাওয়াদাওয়া বা রক্ত আদানপ্রদান কোনো কিছুতেই এই রোগ অপর মানুষের শরীরে স্থানান্তরিত হয় না। কিছু নিয়ম মেনে চললে এই রোগ কাছেও ঘেঁষতে পারে না। চলুন এই রোগ থেকে বাঁচার কিছু উপায় আজ আমরা জেনে নিই........
১) লিভারের নানা সমস্যা থেকেও ত্বকের রোগ বাড়ে। যেমন কারোর গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা বেশি থাকলে তার চুল পাকার সমস্যাও বেশি দেখতে পাওয়া যায়। তাই ত্বককে রোগের হাত থেকে বাঁচাতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ। অতিরিক্ত ভাজাভুজি খাওয়ার ফলে লিভারের সমস্যা ত্বরান্বিত হতে পারে।
২) সোরিয়াসিসের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। সোরিয়াসিস হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এই সময় স্কিন প্রচন্ড ড্রাই হয়ে যায়। সেইজন্য ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত দরকার।
৩) এইসময় ত্বক একেবারেই শুকনো রাখা চলবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ক্রিম তো মাখবেনই তার সাথে সাথে খেয়াল রাখবেন ময়েশ্চারাইজারে যেন কোনোভাবে স্টেরয়েড না থাকে। সোরিয়াসিস দ্বারা ত্বক আক্রান্ত হলে সেইস্থানে গ্লিসারিন একেবারেই লাগাবেন না।
৪) অ্যালাৰ্জি হয় এমন খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। অ্যালাৰ্জির ফলে ত্বকে ইনফ্লেমেশন বাড়তে পারে।
৫) বাইরে থেকে ফিরলে পা ধুয়ে তারপর ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেওয়া উচিৎ। বর্ষার জমা জল পায়ে লাগলে তা থেকে সমস্যা তৈরী হতে পারে।
৬) চামড়ার জিনিস সবার ত্বকে সহ্য হয় না। তাই ত্বকে সোরিয়াসিসের সমস্যা হলে চামড়ার দ্রব্য ব্যবহার বন্ধ করুন।
৭) সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
৮) রোগ সেরে গেলেও অনেকসময় আমরা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিই। এক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে রোগ আবার বেড়ে যেতে পারে।
৯) শীতকালে যেহেতু ত্বক বেশি ড্রাই হয়ে যায় তাই এই সময় ত্বকের বিশেষ খেয়াল রাখা উচিৎ।