কলকাতা শহরের বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের নাম শুনলেই আমাদের মাথায় চলে আসে ‘কেসি দাশ’-এর মিষ্টির কথা। শহরের অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানের মিষ্টান্ন হল এটি। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে একের পর এক আউটলেট রয়েছে তাঁদের। মিষ্টিপ্রেমীরা কিনতেও যায় হুড়মুড়িয়ে।
তবে এবার সেই কেসি দাশের মিষ্টির নমুনা সংগ্রহ করল কলকাতা পুরসভা। তাঁদের ল্যাবরেটরিতে মিষ্টির পরীক্ষা চলছে। কিন্তু কী কারণ রয়েছে এই পেছনে?
সম্প্রতি ‘কেসি দাশ’ দোকানে মিষ্টি কিনেছিলেন কলকাতা পুরসভার যুগ্ম কমিশনার জ্যোতির্ময় তাঁতি। এবার সেই মিষ্টি মুখ দিতে গিয়েই হল এক বিরাট বিপদ! তিনি জানান যে মিষ্টিটা অর্থাৎ সন্দেশটা ছিল একটা কাগজের মোড়কে। মুখে দিতে গিয়ে সন্দেহ গজায় তাঁর মনে। মিষ্টির নীচের অংশটা কেমন আঁঠা আঁঠা। তাঁর মনে হয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
যুগ্ম কমিশনারের কথা প্রকাশ্যে আসতেই মনে আসে এক প্রশ্ন। আমজনতাও কী না বুঝেই এই মিষ্টি খাচ্ছেন? শহরে এত গরম। তার মধ্যে পেট খারাপে ভুগছেন অনেকেই। মিষ্টি নষ্ট হয়ে গেলেও অনেকেই মুখে দিয়ে তা বুঝতে পারেন না। এমন অবস্থায় নষ্ট হয় যাওয়া মিষ্টি খাওয়া খুবই বিপদজ্জনক।
এই বিষয়ে চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন যে তারিখ পেরনো মিষ্টি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক।
তাই সন্দেহ আসতেই দ্রুত কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন কেসি দাশের মিষ্টি। ফুড সেফটি বিভাগের আধিকারিক ডা. তরুণ সাফুই জানিয়েছেন যে কেসি দাশের মিষ্টি নিয়ে এর আগেও অভিযোগ উঠেছিল। আমজনতারা যাতে সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে কিনা, এবার সেইদিকেই দায়িত্ব নিয়েছেন কলকাতা পুরসভা।
আপাতত কেসি দাশের মিষ্টির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার যদি মিষ্টিতে কোনওরকম গন্ডোগোল দেখা যায়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই ঘটনা শুনে কেসি দাশের কর্ণধার ধীমান চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন যে তীব্র দাবদাহের জন্যই মিষ্টি ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা দেড়শো বছর ধরে মিষ্টিপ্রেমীদের মিষ্টি খাইয়ে আসছে।
এই ঘটনা শুনে কেসি দাশের কর্ণধার ধীমান চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন, তীব্র দাবদাহের জন্যই মিষ্টি ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঙালিকে মিষ্টি খাইয়ে আসছে কেসি দাশ। তিনি আরও জানিয়েছেন যে বাঙালি মিষ্টি তরতাজা থাকে ১২ ডিগ্রিতে। সেখানে এই মুহূর্তে শহরের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪৩-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এই তীব্র গরমে মিষ্টি ঠিক রাখা খুবই কষ্টকর। তাঁর মতে, রসগোল্লা, রসমালাইয়ের মতো মিষ্টি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই গরমে। বর্তমানে গরম এতটাই যে ৫ ঘন্টার মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রসগোল্লা।
ধীমানবাবুর দাবি করেছেন যে দোকানের কর্মীদের নষ্ট হয়ে যাওয়া মিষ্টি ফেলে দিতে বলা হয়েছে। কেসি দাশের আউলেটগুলো শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত হলেও অত্যধিক গরমে তাপমাত্রা নির্দিষ্ট রাখা অসম্ভব হয়ে উঠছে।
পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ মিষ্টির নমুনা সংগ্রহ করায় খুশি হয়েছেন কেসি দাশের অধিকর্তা। তিনি জানিয়েছেন যে ল্যাবরেটরিতে যদি দেখা যায় মিষ্টিতে কোনও গন্ডোগোল রয়েছে তাহলে দ্রুত সংশোধন করা হবে।