ঝড় যেমন প্রকৃতিকে ওলট-পালট করে দেয়, তেমনি মানুষের জীবনকেও ওলট-পালট করে দিতে পারে। জীবনে এমন এক একটা সময় আসে, যখন আমাদের কিছুই করার থাকেনা, সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমরা নিজেদের সঁপে দিই। পাশাপাশি নিজেদের যদি সঁপে নাও দিই, তাহলেও ঝড়ের সংগে লড়াই করবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাই। তো এই টানাপোড়েনের গল্প নিয়েই সম্পর্কের এক সূক্ষ্ম সুতোয় নিজের ছবিকে গেঁথেছেন পরিচালক 'দেবজিত বাগচী', তাঁর 'আশ্বিনের ঝড়' ছবিতে। আজকাল বিভিন্নভাবে পরিস্থিতির চাপেই হোক বা মানসিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্ক নিয়ে কাটাছেঁড়া করি আমরা। কিসে যে শান্তি পাব, তা নিজেরাই জানি না। আমাদের সমাজের সম্পর্কের এই গোলকধাঁধাঁ ব্যাপারটাই অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। অবধারিতভাবেই ছবির শেষে তার বিষয়ভাবনা আমাদের ভাবায়। তাই আশ্বিনের ঝড় আমাদের মনে ঝড় তোলে।
ছবির ব্যাপারে বলতে গিয়ে পরিচালক যা বললেন, তাতে আরও চমক অপেক্ষা করে ছিল। এমনিতেই ছবি করিয়েরা একটা ছবি শেষ করার পর পরবর্তী ছবি কি করবেন তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে থাকেন। তো দেবজিত -ও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বাংলার ছোট ছবির বাজার এখনও তেমনভাবে তৈরী না হওয়ায়, পরিচালকরা নিজেদের শখেই ছবি তৈরী করেন। তাই সাধ মেটে ঠিকই, কিন্তু সাধ্য তো মেটে না। সেই কারণেই তাঁর আগের ছবি ‘Left Behind’ করার মধ্যে দু-বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর দেবজিত আর থেমে থাকতে পারছিলেননা। যেভাবেই হোক কিছু একটা করতে হবে- এই মানসিকতা নিয়ে এগিয়েছিলেন।
নিজের জামাইবাবুর তোলা ২০১৭ সালের ওনাম, বাহরিনের কিছু ছবি দেখেছিলেন| যেগুলি ছিল শুধুই শখে তোলা ছবি| মনে ছিল সেই ছবিগুলির কথা, সেগুলোই communicate করতে থাকে মনের বৈঠক| আমেরিকান মাস্টার ফিল্মমেকার ‘জনাস মেকাস’-এর ডায়েরিধর্মী ফিল্ম্গুলি দেখে কিছুটা অন্য ধরণের asthetics সম্পর্কে ধারণা তৈরী হয়েছিল| তাই মন বলছিল found footage দিয়েই কিছু একটা করতে হবে| পাশে পেলেন ফিল্ম এডিটর, সাউন্ডডিজাইনার তথা এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্মমেকার কুনাল বিশ্বাসকে| চিত্রনাট্য, ন্যারেটিভ কিছুই নেই| আছে কিছু খাপছাড়া ফুটেজ আর নিজের সংগী আইফোনে তোলা কিছু ছবি|সেগুলি নিয়েই বসা গেল এডিট টেবিলে, শৈল্পিক মন এবং কাজ করার এককাট্টা মানসিকতার ফলস্বরূপ একটু একটু করে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল ‘আশ্বিনের ঝড়’| “অনেক নামহীন মানুষ, অনেক ছোট ছোট মুহূর্ত আটকে গেল আশ্বিনের ঝড়ের শরীরে| ছবিটার ভবিষ্যত কী বা কেমন তার বিচার করার চাইতে এমন একটা সম্পূর্ণ অন্যরকম ছবির নির্মাতা হিসেবে গর্বিত আমি”| জানালেন দেবজিত| গত ২৩শে মার্চ ২য সাউথ এশিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অংশ হিসেবে ছবিটি নন্দন-এ দেখানো হয়েছে| ফেব্রুয়ারী-২০১৯ এ ৪র্থ রায়পুর শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এ ‘বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফি’-র সম্মান পেয়েছে এই ছবি| এছাড়াও আরও ছোট বড় কিছু ফেস্টিভ্যালে ছবিটি লড়ছে দেশ-বিদেশে| তাই কলকাতায় বসে এরকম একটা অন্য ধরনের ছবি তৈরী করার জন্য পরিচালককে কুর্নিশ|