আজ কার্গিল বিজয় দিবস। শৌর্যে, বীর্যে, সাহসে ভারতীয় বীর সেনাদের স্মরণ করার দিন। আজকের দিনেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্তে জয় ছিনিয়ে এনেছিল ভারতীয় জওয়ানরা। ১৯৭১- এর পর দ্বিতীয়বার। কঠিন শৃঙ্গ, কনকনে ঠাণ্ডা, ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ কোনও কিছুই প্রতিহত করতে পারেনি সেনাবীরদের।
জান কবুল করে দেশমাতা আর দেশবাসীকে রক্ষা করেছিল তারা। তাদের প্রবল পরাক্রমের কাছে হার মেনেছিল পাকিস্তান। ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল দখল করা ভূমি। আজকের দিনে পিছু হঠেছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। ৫৯৯ জন সেনার আত্মবলিদান, ও ১৫৬৩ জনের আঘাতের বিনিময়ে জয় পেয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী।
১৯৯৯ সালের গ্রীষ্মে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইনঅফকন্ট্রোল (LOC) পেরিয়ে ঢুকে পড়তে থাকে ভারতীয় সীমান্তের কাশ্মীরের কার্গিল জেলায়। জম্মু ও কাশ্মীরের আউটপোস্টগুলো দখল নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। ১৯৯৮-এর শরতে তারা এই অভিযানের পরিকল্পনা করে।একাধিক সূত্র বলে গোটা অভিযানটি পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেলমহম্মদ আজিজের মস্তিষ্কপ্রসূত।
অন্যান্যবারের হামলার চেষ্টা থেকে এবারটা যে আলাদা, ঘটনার গুরুত্ব বুঝেই ভারত ২ লক্ষ সেনা পাঠায় কার্গিল সীমান্তে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন অটলবিহারী বাজপেয়ী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
দিনের পর দিন পরিস্থিতি প্রতিকূল হতে থাকে। বাড়তে থাকে আক্রমণের তেজ। পাকিস্তান তাদের অপারেশনের নাম দিয়েছিল ‘বদ্রী’। ভারত নাম দিয়েছিল ‘বিজয়’। স্থল সেনার সঙ্গে বায়ুসেনাও যোগ দিয়েছিল এই অপারেশনে। বিমানবাহিনী নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সফেদ সাগর’।
১৮হাজারফুট উচ্চতায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যুদ্ধ চালায় ভারতীয় সেনা। গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে সবথেকে উচ্চতম যুদ্ধ। যুদ্ধ চলছিল কার্গিল, সিয়াচেন এবং লাদাখ অঞ্চলে। তাপমাত্রা মাইনাস ১০ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা প্রায় ৬০ দিন ধরে কার্গিলের দ্রাস সেক্টরে চলেছিল যুদ্ধ। ২৬শে জুলাই চূড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। ১৯৭২-এর সিমলা চুক্তি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণরেখার দক্ষিণ ও পূর্বের সমগ্র অংশে ভারতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়।
কার্গিল যুদ্ধের কাহিনী আজও ভারতবাসীর মুখে মুখে ফেরে। ‘অপারেশন বিজয়'কে সফল করতে যেসব বীর যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের কাহিনী স্মৃতিতে উজ্জ্বল। আজকের দিনটি তাঁদের স্মরণেই উদ্দযাপিত।