বেথুন কলেজের ‘অগ্নিকন্যা’ বোমা বাঁধতেন নিজের পড়ার ঘরে বসে

বাড়ির দেওয়া নাম কল্পনারানী দত্তগুপ্ত। ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপের সময়ে নিজের নাম লিখেছিলনে কল্পনা দত্ত। পরবর্তী সময়ে ‘কল্পনা দত্ত যোশী’ হলেও ইতিহাস তাঁকে চেনে ‘কল্পনা দত্ত’ নামেই।

রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেছিলেন ‘অগ্নিকন্যা’। চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে বিপ্লবী। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর ছ বছরের (১৯৩৩-১৯৩৯) কারাবাস হয়। অত্যন্ত স্নেহ করতেন চট্টগ্রামের এই মেয়েটিকে। কারাগার থেকে তাঁর মুক্তির পর রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে তাঁকে বলেছিলেন দেশে অনেক কাজ আছে সেই কাজে যেন তিনি নিজেকে প্রবৃত্ত করে। গুরুদেবের কথাই মন্ত্র হয়ে উঠেছিল তাঁর।

বেথুন কলেজের ছাত্রী কল্পনা দত্ত। চট্টগ্রামের ডঃ খাস্তগীর ইংলিশ হাইস্কুল ফর গার্লস থেকে পাশ করে বেরবার পর পড়তে আসেন কলকাতা।  বেথুন হোস্টেলে থাকতে থাকতেই যুক্ত হয়ে পড়েন ‘ছাত্রী সংঘ’ সংগঠনের সঙ্গে। সেই সূত্রেই বিপ্লবী সংযোগ।

স্কলারশিপের টাকায় সাইকেল কিনেছিলেন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যেতেন নৌ-চালনা শিখতে। লাঠিখেলা,  ছোরাখেলা,  যুযুৎসু শিখতেন। সবটাই সক্রিয় বিপ্লবী হয়ে ওঠার প্রস্তুতি। এক সময় বেথুন কলেজ ছেড়ে চট্টগ্রামের কলেজে গিয়ে ভর্তি হন। জীবনের লক্ষই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। ১৯৩১-এ প্রথম সাক্ষাৎ হয় মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে।

তার ঠিক দু’বছর আগেই চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন হয়েছে। গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহের মতো নেতারা জেলে। মাস্টারদা কারাবন্দী বিপ্লবী এবং দলের মধ্যে সেতু হওয়ার ভার দিয়েছিলেন কল্পনাকে। ছদ্মবেশে চলত বার্তা দেওয়ার কাজ।

কল্পনা বোমা বাঁধতেন নিজের পড়ার ঘরে বসে। এক সময় পুলিশের সন্দেহ ঘোরে তাঁর দিকে। গতিবিধির ওপর নজর রাখা শুরু হয়। পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের জন্য কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ওপর দেন মাস্টারদা। 

ওই ঘটনার জেরেই তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। প্রমাণের অভাবে দু’মাস পর ছাড়া পান। মাস্টারদা তাঁকে পলাতক হওয়ার নির্দেশ দেন।

এই নির্দেশ কল্পনার জীবনে এক অভাবনীয় ব্যাপার। পরবর্তী সময়ে নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, “সন্ত্রাসবাদী দলে এক সময় মেয়েদের আসা নিষিদ্ধ ছিল। এই দলে আসতে পারাটা সৌভাগ্যের কথা বলে মনে করেছিলাম। এখন শুধু দলে আসা নয়, একেবারে মাস্টারদার সঙ্গে থেকে মাস্টার সাথে কাজ করা, মাস্টারদার প্রত্যক্ষ নির্দেশ নিয়ে চলা। জীবনে অভাবনীয়, অপ্রত্যাশিত ব্যাপার”।

মাস্টারদা সূর্য সেন গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন পর গ্রেফতার হন কল্পনা। ৬ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পান। কারাত্তোর জীবনে কল্পনা দত্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ইংরেজি, চীনা এবং রাশিয়ান ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ-এর সম্পাদক ও শিক্ষিকা হন। ইন্দো-সোভিয়েত কালচারাল সোসাইটি ও ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান উইমেন-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর বই এবং লেখালেখি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের দলিল।

দেশের এই অগ্নিকন্যার জন্ম হয়েছিল আজকের দিনে। সন ১৯১৩।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...