কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী। এই দিন চোদ্দ শাক খাওয়ার এক রীতি প্রচলিত রয়েছে ঘরে ঘরে। প্রতিবছর এইদিনে নিয়ম করে ১৪ রকম শাক রান্না হয় হেঁশেলে। কিন্তু পুজোর রীতির বাইরেও এই চোদ্দ শাক অন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভূত চতুর্দশী-র দিন এই চোদ্দ শাক খাওয়ার এক অন্য কারণ।
হাইলাইটসঃ
১। ভূত চতুর্দশীর দিন চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে
২। চোদ্দ শাকগুলি কী কী?
৩। কেন খাওয়া হয় এই শাক?
চোদ্দ শাকের পরিচয় এক শ্লোকে পাওয়া যায়। শ্লোকটি হল –
“ওলং কেমুকবাস্তুকং সার্ষপঞ্চ নিম্বং জয়াং। শালিঞ্চিং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ুচীন্তথা। ভন্টাকীং সুনিষণ্ণকং শিবদিনে যদন্তি যে মানবাঃ প্রেতত্বং না যান্তি কার্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।’’
কৃত্যকৃত্ব/রঘুনন্দন
সহজ ভাষায় শ্লোকে উল্লিখিত এই চোদ্দ শাক হল, ওল ডাঁটা, কেউ, বথুয়া, কালকাসুন্দ, সরষে, নিম, জয়ন্তী, শালিঞ্চে বা শিঞ্চে, গুলঞ্চ, পটল বা পলতা, শেলুকা, হিলমোচিকা বা হেলেঞ্চা, ভাঁট বা ঘেঁটু ও সুনিষণ্ণক বা শুষনি শাক। কিন্তু এই শাক খাওয়ার প্রচলন শুধুমাত্র একটি নিয়মকে জানান দেয় না, বরং এর সাথে রয়েছে এক কৃষিপ্রধান সংস্কৃতিকে বহন করার ইঙ্গিত।
খেয়াল করলে বোঝা যায়, এই চোদ্দ শাক ভিন্ন প্রকারের, ভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত শাকের অন্তর্গত। এটি মূলত সুন্দর-সুগঠিত কৃষি ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। এই চোদ্দ রকমের শাককে সহজলভ্য করার জন্য কৃষিব্যবস্থার প্রতি আরও যত্নবান হতে হবে। এটাই এই রীতি বা নিয়মের অভ্যন্তরীণ অর্থ। এছাড়াও এই সমস্ত শাকগুলি মাটিতে নাইট্রোজেনের উপাদান বাড়ায়। ফলে এই শাক চাষ করলে, মাটির উর্বরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই চোদ্দ শাক ছাড়াও এইদিন বঙ্গের অন্যান্য অনাবাদি শাকগুলিও খাওয়া যেতে পারে। যেমন- গিমা, থানকুনি, কাঁটানটে বা খৈরাকাটা, কচু, ঘাগরা বা হাগড়া (বিষাক্ত), মালঞ্চ, বাসক, চুকোর বা টক ভেন্ডি, কস্তরী, মোরগফুল, কালমেঘ বা আলুই, আমরুল, কলমি, কুলেখাড়া, খারকোন বা ঘাটকোল, ব্রাহ্মী, ঢেঁকিশাক, নুনিয়া বা নুন খুড়িয়া, তেলাকুচা, দণ্ডকলস ইত্যাদি।
তবে চাষের উর্বরতা বৃদ্ধি ছাড়াও এই শাক খাওয়া শরীর পক্ষে খুব উপকারী। আগামী কার্তিক মাসে ঋতু পরিবর্তনগত সমস্যা যেমন, শ্লেষ্মা, অগ্নিবৃদ্ধি, আড়ষ্টতা প্রভৃতি বাড়ে মানব শরীরে। এই শাক সেই সমস্ত রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শুধুমাত্র এই নির্দিষ্ট দিনেই নয়, সারাবছর ধরেই নানা ধরনের শাক খাওয়া শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।